চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার, পাশে পড়ে ছিল চিরকুট

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও র‌্যাব-৭ ক্যাম্প থেকে পলাশ সাহা (৩৭) নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল একটি চিরকুট। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম পলাশ সাহা। তিনি ৩৭তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা। পলাশ সাহা র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসেন জানান, বহদ্দারহাট ক্যাম্পে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অস্ত্র ইস্যু করে তিনি নিজের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পর শব্দ শুনে কর্তব্যরত অন্য র‌্যাব সদস্যরা তার কক্ষে যান এবং তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পান। সেই সময় তার নিজ ইস্যুকৃত পিস্তল নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে পলাশ সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের পাশে একটি গর্তের মতো চিহ্ন রয়েছে, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে কিসের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে।’

পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পলাশ সাহার মৃত্যুর পেছনে ব্যক্তিগত হতাশা, পারিবারিক সমস্যা কিংবা চাকরিসংক্রান্ত কোনো চাপ ছিল কি না-তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিরকুটে ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করলেও বিষয়টির পেছনে অন্য কোনো প্ররোচনা বা গাফিলতি ছিল কি না, সেটিও তদন্ত করে দেখা হবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম জানান, অফিস কক্ষে পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুটও পাওয়া গেছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৭তম ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন পলাশ সাহা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। তিনি তৃতীয় এপিবিএন খুলনার অধীনে ঝিনাইদহে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে বদলি হয়ে ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় যোগদান করেন। সম্প্রতি তিনি র‌্যাব-৭-এ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।