আজ ১০ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি পালন করে আসছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’। সম্প্রতি এক গবেষণার দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজার থেকে ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
এদিকে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯৪ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গত বছর চট্টগ্রামে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই চট্টগ্রামের কোথাও না কোথাও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছিল। চলতি বছরেও তা অব্যাহত আছে। সারা দেশের থানা, পুলিশ ফাঁড়ির দেয়া তথ্যানুযায়ী বিশেষ করে থানায় লিপিবদ্ধ মামলার তথ্যানুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩১টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ হিসাবে মাসে এ ধরনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে ৯০০ জনের। আর বছরে আত্মহননে মৃত্যু ঘটে ১০ হাজার ৮০০ জনের। এসব মৃত্যুকে আত্মহত্যা বা আত্মহনন বলে থানায় প্রদত্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে অনেক সময় প্রকৃত আত্মহত্যায় বা আত্মহননে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয় না।
২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা-প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রাত্যহিক জীবনের অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয় ও মাদক ইত্যাদি কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। আর কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বেও এমন দেখা যাচ্ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসিক রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বিষণ্ণতার রোগীদের মধ্যে এক ধরনের তীব্র আশাহীনতা তৈরি হয়। তারা মনে করে মুক্তির একমাত্র উপায় নিজেকে মেরে ফেলা। এ চিন্তায় তাড়িত হয়ে তারা আত্মহত্যা করে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের মধ্যে কীটনাশক পানের প্রবণতা বেশি। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এর পরে রয়েছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা, ট্রেন বা বাসের নিচে ঝাঁপ দেয়া, উঁচু ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া, গায়ে আগুন দেয়া, নিজের শরীরে অস্ত্র চালানোর মাধ্যমে আত্মহত্যা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না করার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা সাধারণত ইউডি (আননেচারাল ডেথ বা অপমৃত্যু) হিসেবেই যবনিকাপাত ঘটে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে যদি আত্মহত্যার মামলাগুলো তদন্ত করা যায় তাহলে বেশির ভাগ আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের সনাক্ত করা সম্ভব। তবে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে আইনের এই ধারাটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।