চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সম্মেলনের ডামাডোলের মাঝে শীর্ষ দুই পদের একটিতে আলোচনায় আছেন এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চু। কিন্তু সম্মেলনের আগমুহূর্তে হুট করেই আলোচনায় এলো বাচ্চুর বড় ভাই মঞ্জুর আলমের নাম। তার বড় ভাই বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগ করে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পক্ষ জুড়ে দিয়েছেন প্রশ্ন।
যুবলীগের পদ পেতে এই প্রশ্ন কতটা প্রাসঙ্গিক সে প্রশ্ন যেমন উঠেছে তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনে বাচ্চুর প্রতিপক্ষের কাছে তার বড় ভাইয়ের রাজনৈতিক অবস্থান কি- তার উত্তর মেলানোও যেন জরুরি হয়ে পড়েছে।
তাই আলোচিত এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে চট্টগ্রাম খবর। যোগাযোগ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও।
এমনকি এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন আওয়ামী রাজনীতির কিংবদন্তী-এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী, চান্দগাঁওয়ের আদি বাসিন্দা, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। যিনি দীর্ঘদিন ধরে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদেও।
মঞ্জুর আলম। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক ছেলে, এক মেয়ের পিতা তিনি। ভাই-বোনের মধ্যে তার অবস্থান তৃতীয়। পেশায় তিনি পরিবহন ব্যবসায়ী। সিএন্ডবি’র বিসিক শিল্প এলাকার গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন কাজে নিয়োজিত আছে তার মালিকানাধীন কয়েকটি ট্রাকও। চান্দগাঁও-কালুরঘাট ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সহ-সভাপতিও তিনি। আবার কন্সট্রাকশন, সাপ্লাই ও ওয়ার্কসপ ব্যবসাও আছে তার।
স্থানীয় কয়েকজনক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ২০০৫ সালে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মঞ্জুর আলম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গঠিত নাগরিক কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে কথা হয় আরশেদুল আলম বাচ্চুর বড় ভাই মঞ্জুর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা নিয়েই জীবন পার করেছি। রাজনীতিতে সবসময় সমানতালে সক্রিয় ছিলাম না। তবে ২০০৯ সালের নির্বাচনে, ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী বাদল ভাইয়ের জন্য কাজ করেছি। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রেজাউল ভাইয়ের জন্য কাজ করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতীতে যদি বিএনপি করতাম তাহলে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার বিয়েতে আসতেন না। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন, ভালবাসতেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে নাগরিক কমিটিতেও আমি কাজ করেছি।’
স্থানীয়রা জানান, ৯০ পরবর্তী সময়ে স্কুল ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে আরশেদুল আলম বাচ্চু ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় শিবিরের গুলিতে নিহত ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ ছাত্রসংসদের সংগ্রামী ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক শহীদ মোহাম্মদ এনামুল হক এনামের বন্ধু বাচ্চু। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বাচ্চু রাজনীতি করতেন ওমরগণি এমইএস কলেজে।
২০০০ সালে ছাত্রলীগের আঁতুরঘর খ্যাত এ কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচনে তিনি জিএস পদে নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে ঘোষিত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মনোনীত হন আরশেদুল আলম বাচ্চু।
এরপর থেকে বাচ্চু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়ের হয়ে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডেই শক্ত অবস্থান তৈরি করেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে।
মঞ্জুর আলম সম্পর্কে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার আদি বাসিন্দা ও চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘মঞ্জুর আলম গত চসিক নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করতে রাত দিন আমার সাথে কাজ করেছে। মঞ্জু ভিন্ন কোনো মতাদর্শ লালন করলে এমনটি করতো না। তাকে আমি বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একনিষ্ট কর্মী হিসেবে পেয়েছি।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মঞ্জুর আলম আংকেলকে সিএন্ডবি এলাকায় ব্যবসায়ী হিসেবে চিনি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন উনাকে দেখেছি চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন। প্রয়াত সাংসদ মাঈনুদ্দিন খান বাদলেরও অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। তার ছোট ভাই আরশেদুল আলম বাচ্চুও চান্দগাঁও এলাকায় ছাত্রলীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মুলত এই পরিবারটি ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত।’
চান্দগাঁও থানা যুবলীগের সহ সভাপতি মো. হানিফ বলেন, ‘মঞ্জুর আলম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় কোনো ব্যক্তি নন। আমাদের আওয়ামী লীগের প্রয়াত থানা সভাপতি নুরুল ইসলাম সাহেব বিভিন্ন কাজে মঞ্জুর আলমকে ডাকতেন। তার সঙ্গে পরামর্শ করতেন।’
চান্দগাঁও-কালুরঘাট ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. বখতিয়ার বলেন, ‘মঞ্জুর আলম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকেন না। তিনি পরিবহন ব্যবসায়ী। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। পারিবারিকভাবেই তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দাগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নুরুন নবী শাহেদ বলেন, ‘ছোট থেকে মঞ্জুর আলম ভাই আমাদের পরিচিত। স্কুল জীবন থেকে তাকে দেখেছি মুজিববাদী চেতনায় তিনি বিশ্বাসী। প্রয়াত সাংসদ মাঈনুদ্দিন খান বাদল ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় নৌকার পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিমের পক্ষে প্রচারণাসহ প্রত্যক্ষভাবে তিনি কাজ করেছেন। চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি নুরুল ইসলাম চাচার সাথে তিনি সবসময় আওয়ামী লীগের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।’
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।