চট্টগ্রামে রক্তের ভুল গ্রুপ শরীরে সঞ্চালন—মৃত্যু শয্যায় প্রসূতি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকলেও লোভনীয় অফার দিয়ে সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরোনো। জটিল রোগের ক্ষেতে ভুল রিপোর্ট নিয়মিত হয়। এবার অভিযোগ উঠেছে রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয়ের। ভুল গ্রুপের রক্ত সঞ্চালেন ফলে এক প্রসূতি এখন মৃত্যু শয্যায়।

জানা গেছে, ১৩ মে উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের গৃহবধূ নারগিস আক্তার প্রসব বেদনা নিয়ে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। তার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ হলেও তার শরীরে এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত সঞ্চালন করা হয়। সাথে সাথেই তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। স্বজনরা তাকে নগরীর আগ্রাবাদস্থ চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক গৃহবধূ নার্গিসকে আইসিইউতে ভর্তি দেন।

অভিযোগ আছে মিরসরাইয়ের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চেম্বার করেন ঢাকা, চট্টগ্রামের নাম করা চিকিৎসরা। অতিথি চিকিৎসদের ছাড়া এসব হাসপাতাল সপ্তাহে ৫ দিন মানসম্পন্ন কোনো চিকিৎসক থাকেন না। প্রসূতিদের অপ্রয়োজনীয় সিজার অপারেশনের আয়েই টিকে আছে এই হাসপাতালগুলো। জরুরী চিকিৎসা দেওয়ার ডাক্তার না থাকলেও গর্ভবতীর সিজারের জন্য প্রস্তুত থাকেন তারা। তাদের আয়ের অন্যতম ভরসা সিজার।

ভূক্তভোগী খালেদ মাসুদ জানান, তার স্ত্রী নারগিসকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে উপজেলার বারইয়ারহাটের নাইটেঙ্গেল ডায়্যাগনস্টিক ল্যাবে। সেইখানে থেকে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করলে তারা রক্তের গ্রুপের রিপোর্ট ভুল দেয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভুল রিপোর্টের কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হতো। তার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ হলেও তার শরীরে এ পজিটিভ রক্তের গ্রুপ পুষ করে দেয়। ও এখন আইসিইউ বেডে ভর্তি রয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করেআমার স্ত্রীর চিকিৎসা করতেছি। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচালক কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা নাইটেঙ্গল ভুল করছে। আমরা ওই রিপোর্ট দেখে রোগীর শরীরে রক্ত গ্রুপ পুষ করছি। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে চট্টগ্রামে রেফার করি।’

নাইটেঙ্গল ডায়াগনস্টিক ল্যাবের পরিচালক রাজিব পাটোয়ারী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আলোচনা করতেছি। কনফার্ম হয়ে জানাবো আপনাকে।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। রোগীর স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।