চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত—সাড়ে ৩ বছরে ২ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ী উধাও হওয়া কিংবা গড়িমশি করে ঋণ পরিশোধ না করার ঘটনা রয়েছে প্রচুর। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের শক্ত অবস্থানের কারণে গত সাড়ে গত সাড়ে ৩ বছরে এই আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে ব্যাংকগুলোর প্রায় ২ হাজার ৮১৬ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৪ টাকা ঋণ আদায় করেছে। পাশাপাশি ৪ হাজার ৮৩১টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। এর মধ্যে ১০ বছরের অধিক পুরনো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২১৩টি।

এক সময় যেখানে মামলার জট লেগেই থাকত, সেখানে এখন গড়ে ২ থেকে ৩টি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে প্রতিদিন। আদালত সূত্রে জানা যায়, ঋণ পরিশোধে বাধ্য করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর তাগাদা প্রেরণ করে খেলাপিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় টাকা পরিশোধে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায় ও মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান চট্টগ্রামে এসে বিচারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থ আদায় ও মামলা নিষ্পত্তি সন্তোষজনক হওয়ায়।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের অন্যতম কারণ আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি।
ব্যাংকের টাকা ঋণ নিয়ে বিত্তবান হওয়া বেশিরভাগ খেলাপি হয়ে আত্মগোপনে ও বিদেশ পাড়ি জামানোর ঘটনা দীর্ঘ দিনের। খেলাপিদের সরে পড়া এবং পরোয়ানার বিষয় জেনে গা-ঢাকা দেওয়ায় মামলাজটে পড়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় আদালতের। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছে, তেমনিভাবে বিচার কার্যক্রমও ব্যাহত হয়ে বাড়ে মামলার জট।

অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম জানান, চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে গত সাড়ে ৩ বছরে ২ হাজার ৮১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণ এবং ৮ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৯৬০ টাকার অধিক কোর্ট ফি আদায় হয়েছে। খেলাপিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে ৫ হাজার ২৭৬টি।

২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর অর্থঋণ আদালতে যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান যোগদান করে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন বিপুল মামলা নিষ্পত্তির জন্য নানা উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আদেশ প্রদান। এতে খেলাপিরা মামলা নিষ্পত্তিতে এগিয়ে আসে, বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায় হয়।
পাশাপাশি খেলাপিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত হয়। বিবাদীদের আদালতে সশরীরে উপস্থিতির কারণে বন্ধকী সম্পত্তি উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রচুর ঋণ আদায় হচ্ছে, যা অতীতে হয়নি।

ঋণ গ্রহীতারা বন্ধকী সম্পত্তি গোপন রাখত। কিন্তু আদালতের আদেশের কারণে বন্ধকী সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে একই সম্পত্তি একাধিক ব্যাংকে বন্ধক দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।