চড়ুইভাতিতে মেতেছে কোমলমতি শিশুরা

নিছা, তাসপিয়া, মাইশা ও হুমায়রা। তারা কেউ শিশু শ্রেণী, কেউবা প্রথম শ্রেণী আবার কেউবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছেন। তাদের মতো শতাধিক শিশু দুপুরে স্কুলের চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানের আয়োজনে মেতেছে। এবারের চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে ছিল নজরকাড়া সব আয়োজন। ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনমেলায় দিনভর মুখরিত হয়ে উঠেছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। কোনো কৃত্রিমতা নয়, এটি ছিল চিরাচরিত গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য চড়ুইভাতি। এ সময় হেসে-খেলে, নেচে-গেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থীদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষকসহ উপস্থিত সবাই।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এমন চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে। এতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে উপস্থিত ছিলেন অভিভাবকসহ এলাকার সুধীজনরাও।

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে প্রতিবছর স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান করে আসছেন বলে জানান সহকারি শিক্ষক মো. জিয়া উদ্দিন চৌধুরী।

স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় রংধনুর সাত রংয়ে সাজানো হয়েছে পুরো স্কুলটি। প্রতিবারের মতোই এবারও চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে ছিল নানা আয়োজন। দুপুরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা টেবিলে পরিবেশন করছে নিজেদের খাবার। কেউ এগিয়ে দিচ্ছেন পানি ও খাবার, কেউ ধৌত করছেন থালা-বাসন। কেউ কেউ মেতেছে বিভিন্ন খেলাধুলায়। আবার কেউবা রোদ পোহাচ্ছিল বিদ্যালয়ের মাঠে। ঠিক এভাবেই শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে শিক্ষকরাও যেন ফিরে যান ক্ষণিকের জন্য বাল্যবেলায়।

শুধু রান্নাবান্না বা খাওয়া-দাওয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই অনুষ্ঠান। রান্না শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে হরেক রকমের খেলাধুলা। যার মধ্যে ছিল বেলুন পাসিং, ঝুড়িতে বল ফেলা, কুইজ, লটারির মাধ্যমে ছড়া, কবিতা, কৌতুক ও বিভিন্ন মজাদার বিষয়ে আড্ডা। এছাড়া গলায় গলা মিলিয়ে ছেলে-মেয়ে একসাথে মেতেছিল গানের আড্ডায়ও।

চড়ুইভাতিতে মেতেছে কোমলমতি শিশুরা 1

শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুরুল আমীন সোহেল ও জয়নাল আবেদীন বাপ্পু বলেন, ‘আজকের এই আয়োজন আমাদের জন্য সত্যিই অনেক বড় পাওয়া। ব্যস্ততার কারণে সময় হয়ে ওঠে না। তবে আজ অনেক আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম আর তা পূরণও হয়েছে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে এই প্রোগ্রাম কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর হয়েছে।’

স্কুলের শিক্ষার্থী তাহসিন ও রিয়াদ বলেন, ‘স্কুলে প্রতিবছর আমাদেরকে নিয়ে চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান করেন। এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা অনেক মজা করি। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা, নাচ-গান, আনন্দ করি। আমরা চাই এমন মজার আয়োজন সব সময় হোক।’

চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সলিমুল্লাহ বলেন, ‘চড়ুইভাতি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থাপন করতে ২০০৮ সাল থেকে আমরা এমন আয়োজন করে আসছি। এ ধরনের অনুষ্ঠান শিশুদের মানবিক ও নান্দনিক বিকাশে সহায়তা করে।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।