চবিতে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত কার্যকর, মাস পেরোলেও পৌঁছেনি কার্যবিবরণী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আইন অনুযায়ী একটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তার কার্যবিবরণী প্রতি সিন্ডিকেট সদস্যের নিকট পৌঁছে দিবেন কর্তৃপক্ষ। সদস্যরা কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে কোনো সংশোধনী থাকলে তা লিখিত আকারে কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিবেন। এটার জন্য সদস্যরা ৭ দিনের সময় পাবেন। সদস্যরা লিখিত আকারে সংশোধনী জমা দেয়ার পরই কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবেন কিংবা সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৪১ দিন পেরিয়ে গেলেও সিন্ডিকেট সদস্যদের নিকট কার্যবিবরণী পৌঁছায়নি কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, সদস্যদের নিকট কার্যবিবরণী না পাঠিয়েই সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া এর আগে গত ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়া ৫৪৩তম সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী পাঠাতেও প্রায় ৪ মাস সময় নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গত ১ আগস্ট চবির পালি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নির্বাচনি বোর্ডের তথ্য গণমাধ্যমকে দেয়া ও বোর্ড চলাকালীন অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে বিভাগটির সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কমিটি গঠন করা হয়।

এভাবে সিন্ডিকেট সদস্যদের নিকট কার্যবিবরণী না পৌঁছিয়ে সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাটাকে স্পষ্টতই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরপন্থী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত রোববার (২০ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বরাবর চিঠিও প্রেরণ করেছেন সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী। চিঠিতে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে ৫৪৪তম সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী প্রদান না করে উল্লিখিত সিন্ডিকেটের সূত্র উল্লেখ করে বিভিন্ন কার্যক্রম বিশেষ করে পালি বিভাগের সভাপতি সংশ্লিষ্ট গঠিত তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত বিধির লঙ্ঘন বলে মনে করি।

অতএব, ৫৪৪তম সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী জরুরী ভিত্তিতে প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, নিয়ম হচ্ছে সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের নিকট পৌঁছানো। এরপর আমরা সংশোধনী প্রেরণ করলে তবেই কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু ৪০ দিন হয়ে গেছে তবুও কার্যবিবরণী না পাঠিয়েই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপন্থী। তাই আমি উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ করছি।

অপর একজন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. নঈম উদ্দিন হাসান আওরঙ্গজেব বলেন, নিয়মানুযায়ী সিন্ডিকেটের ১৫ দিনের মধ্যে কার্যবিবরণী সিন্ডিকেট সদস্যদের নিকট প্রেরণ করা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে প্রতিবারই দেরি করেন। পরের সিন্ডিকেট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ মুহূর্তে আগের সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী দিচ্ছেন। এটা নিয়ে গত সিন্ডিকেটেও অনেক কথা বলেছি। তবুও দেখা যাচ্ছে যে এটার কোনো প্রতিফলন নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদ বলেন, আমি এটা রেডি করেছি ঠিক কিন্তু উপাচার্য সময় পাননি বিধায় অনুমোদন দিতে পারেনি। গত পরশুদিন (মঙ্গলবার) এটা অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। আজকের মধ্যেই পাঠিয়ে দেব।

কার্যবিবরণী না পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্রিটিকাল কোনো সিদ্ধান্ত না হলে উপাচার্যের পারশিয়াল অনুমোদন নিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়। আমরা সেভাবেই করেছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।