গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দুইজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এর প্রতিবাদে শাখা ছাত্রদল একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের কাছে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের মহিবুল ইসলাম মহিব ও নিরব আহমেদ।
জানা গেছে, মহিবুল ও নিরব একত্রে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে একটা বারবিকিউ পার্টি শেষে রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন। এসময় ৫-৬ দুর্বৃত্ত তাদের সামনে এসে পথরোধ করে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা মাফলার এবং মুখোশ পরিহিত ছিল। ফলে দুর্বৃত্তদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
পরে শিক্ষার্থীদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসক দেওয়া হয়। এদিকে দুর্বৃত্তদের হামলায় ঘটনায় খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদেরকে দেখতে মেডিকেল সেন্টারে গিয়েছেন বলে জানা গেছে।
হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সহপাঠী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন আশিক বলেন, গতরাতের ঘটনাটা ছিল একরকম হত্যাচেষ্টা। নিরাপত্তা দপ্তরের একজন কর্মীর সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। নিরাপত্তা দপ্তরের সবাই আমাদের সাথে অসহযোগিতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় চার ঘন্টা আমরা প্রক্টরিয়াল বডির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু কেউই আমাদের ফোন রিসিভ করেনি। নিরাপত্তা দপ্তরের সামনে এই ধরনের নিরাপত্তাহীনতা আমাদের আগামীদিনের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জুমা’র নামাজের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মূল ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের চবি শাখার বিভিন্ন নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চবি সমম্বয়ক মশিউর রহমান সোহাগ বলেন, গত রাতে নবীন দুইজন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছেন৷ তারা কয়মাস হলো ক্যাম্পাসে এসেছে? আর তাদের কাছে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসীর আঙিনা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই একটি গ্রুপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি, তাদেরকে দ্রুত শনাক্ত করে বিচার করুন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, যারা নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এ ছাড়া নিরাপত্তা দপ্তরের সামনে হামলা হয়েছে। যেখানে সবসময় প্রহরীরা থাকে। দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে পালিয়ে গেছে কিন্তু প্রহরীরা তাদের ধরতে পারেনি।
একইদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চবি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আল নোমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে হামলার ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। এ সময় হামলায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলায় ঘটনায় নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা ঘটনাটি জানার পরপরই ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠায়। তারা আশেপাশের পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছে কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরেই আমাদেরকে এমন কিছু ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি সচল ছিলো না। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় ৯০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আমরা সবগুলো ফুটেজ চ্যাক করছি। অপরাধী যেই হোক তাকে রবিবারের মধ্যেই শনাক্ত করার চেষ্টা করবো। আইনের আওতায় এনে অবশ্যই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।