বউচি, কাবাডি, পুতুলনাচ, বলিখেলাসহ আরও কত আয়োজন! ক্যাম্পাসের জায়গায় জায়গায় বসেছে দেশিয় নানান পণ্য, খেলনা, খাবার, আসবাবপত্র ও সাজগোজের সামগ্রীর বাহারি দোকান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বলছিলাম বাংলা সনের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আয়োজন-উৎসবের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উৎসব বর্ষবরণের আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বৈশাখী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ‘পহেলা বৈশাখে হোক অঙ্গীকার আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অধিকার’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছে চবি কর্তৃপক্ষ। দিনব্যাপী নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে।
সরজমিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে বসেছে হরেক রকমের দোকান। এসব দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে ঢোল-তবলাসহ দেশিয় তৈরি নানা সামগ্রী। নানা রঙের খেলনা ও হাতের তৈরি সামগ্রী দোকানগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
এদিকে দোকানে দোকানে ঘুরে এসব জিনিসপত্র ক্রয় করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থী দর্শনার্থীদের। শিক্ষার্থী তানজিলা রায় জানান, ক্যাম্পাসের সাজসজ্জা, বাজার এবং খেলাধুলা—সব কিছু মিলিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ একদম অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে। আরেক শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, বর্ষবরণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করে।
এদিন বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ জনতা উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করে জারুলতলায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর জারুলতলায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও চবি শিক্ষার্থী উম্মে সালমা নিঝুম ও শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বুঝিয়ে নেওয়ার উৎসব। সামাজিক ক্লাব আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান একই দেখা যায়। আমরা আগামী বর্ষবরণ উৎসবে একাডেমিক ফ্লেভার যুক্ত করার চেষ্টা করবো। পুরাতন সিলেবাস বাতিল করে নতুন সিলেবাস চালু করা এটাই আমাদের বর্ষবরণ। বর্ষবরণ উপলক্ষে বাংলাদেশের গীতিকারদের তেমন কোন গান নেই। বাংলা বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক, গীতিকাররা বর্ষবরণ উপলক্ষে নতুন নতুন গান রচনা করবেন আমি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দায় আরিফ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভার পর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু প্রাঙ্গনে বউচি খেলা, উন্মুক্ত মঞ্চে পুতুল নাচ, মুক্ত মঞ্চে বলি খেলা ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে কাবাডি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও শিক্ষক শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের ২য় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ প্রাঙ্গণে নাগরদোলাও স্থাপন করা হয়েছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।