সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভা বারবার পেছানো হচ্ছে। এ নিয়ে মোট ২ বার সিন্ডিকেট সভা পিছিয়ে আগামীকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) ৩য় বারের মতো সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। যা নগরীর চারুকলা ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে সিন্ডিকেট সভার একদিন আগেই বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পদোন্নতি বোর্ড চারুকলা ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। হুট করে সিন্ডিকেটের একদিন আগে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পদোন্নতি বোর্ড বসানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের বাইরে সিন্ডিকেট সভা ও পদোন্নতি বোর্ড বসানোয় সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, প্রতিমাসে একটি সিন্ডিকেট সভা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট নির্বাচনের ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্যরা একটি সিন্ডিকেট সভাও পাননি। এদিকে অবশেষে ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করলেও সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া বারবার তা পেছানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চবির সিন্ডিকেট সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার (৯ জুলাই) প্রথমবারের মতো ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন উপাচার্য। পরবর্তীতে তা একদিন পিছিয়ে সোমবার (১০ জুলাই) নির্ধারণ করা হয়। পরে আবারও পিছিয়ে আগামীকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) সিন্ডিকেট সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পদোন্নতি বোর্ডটা আগে সম্পন্ন করতে না পারার কারণেই সিন্ডিকেট সভাকে বারবার পেছানো হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো নিয়োগ, পদোন্নতিসহ যেকোনো বিষয় খুবই পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেটের একদিন আগে বোর্ড বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব আছে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, এখানে এমনও হতে পারে যে কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করা ও নানাভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে পদোন্নতি দিতেই তড়িঘড়ি করে বোর্ড বসানো হয়েছে। কারো কোনো স্বার্থ কিংবা লাভ যদি না থাকে তাহলে এভাবে সিন্ডিকেটের একদিন আগে বোর্ড বসানোর কথা না।
মূল ক্যাম্পাসের বাইরে সিন্ডিকেট সভা ও বোর্ড বসানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে নিয়োগ, পদোন্নতিসহ নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় এক্ষেত্রেও শিক্ষক সমিতি কোনো স্পষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে এ আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে সিন্ডিকেট সভা ও পদোন্নতি বোর্ডের আয়োজন করে থাকতে পারে।
এদিকে সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডা জানানোর ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ নানাভাবে টালবাহানা করেছেন বলে জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী সিন্ডিকেট সভার ৭ দিন আগে এজেন্ডাগুলো সিন্ডিকেট সদস্যদেরকে জানিয়ে দিতে হয়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথমে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত না করে এজেন্ডার তালিকা সদস্যদের নিকট প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে গতকাল বুধবার (১ও জুলাই) রাতে নতুন অনেক বিষয় এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় এজেন্ডার তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্যসূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও, রাতের বেলা সিন্ডিকেট সদস্যের বাসার দারোয়ানের কাছে এজেন্ডার তালিকা দিয়ে আসায় অনেকে সমালোচনা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, নিয়ম হচ্ছে সিন্ডিকেট সভার ৭ দিন আগে কী কী এজেন্ডা থাকবে তা আমাদের জানিয়ে দেয়া। কিন্তু এবারে প্রথমে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত না করেই আমাদেরকে এজেন্ডা জানানো হয়। কিন্তু গতকাল রাতে আবার অনেকগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নতুন এজেন্ডার তালিকা পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল সিন্ডিকেট সভা, এত অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো এজেন্ডা পড়ব কখন আর বিশ্লেষণ করব কখন আমি বুঝতেছি না।
এদিকে বারবার সভা পেছানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্য ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্যই কিন্তু সিন্ডিকেট গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খুঁটিনাটি সব বিষয়েই সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন হয়ে আসে। কিন্তু এভাবে যদি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে বারবার পেছানো হয় তাহলে এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অবশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির জন্যও এটি বাধা স্বরূপ।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত নানা শিডিউল থেকে সময় বের করে সিন্ডিকেট সভার জন্য সময় বের করেছিলাম। কিন্তু পরপর দুইবার সিন্ডিকেট সভা পেছানোর কারণে ব্যক্তিগতভাবেও আমরা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি।
অপর একজন সিন্ডিকেট সদস্য ড. নঈম উদ্দিন হাসান আওরঙ্গজেব বলেন, আসলে এভাবে বারবার সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে পেছানোটা ঠিক না। কিন্তু অনেকের একান্ত বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনে সিন্ডিকেট সভা পেছানোর দরকার হয়ে পড়ে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।