চবিতে মারামারির তদন্তে বেরিয়ে এলো ভুয়া ছাত্রের পরিচয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এক ভুয়া ছাত্রের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। ইমন হাসান রাব্বি (ফেইসবুক নাম) নামের ওই শিক্ষার্থী ভুয়া পরিচয়ে গত ২ বছর ধরে নিয়মিত ইতিহাস বিভাগে ক্লাস করছেন তিনি। থেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুর রব হলেও।

জানা গেছে, গত ২১ মে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় গ্রুপের ২৩ নেতাকর্মীকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২৩ জনের মধ্যে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নামও রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শোকজকৃত ২২ নেতাকর্মীর হল, বিভাগ ও পরিবারের নিকট শোকজ চিঠি পাঠানো গেলেও ১ কর্মীকে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনের। তার নাম এবং রোল নাম্বার কিছুই মেলেনা। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেই ছাত্রলীগ নামধারী চবির ছাত্রই নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিহাস বিভাগের ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সময় নাম ও রোল নাম্বার গড়মিলে ধরা পড়েন এই ভুয়া শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০২ নম্বর ক্লাস টেস্টের সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার সময় তার নাম না পেলে সন্দেহ হয় কোর্স শিক্ষক গোলাম কুদ্দুস লাভলুর। পরে একান্তে ডেকে নিয়ে তিনি জানতে পারেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থী-ই না।

এ বিষয়ে চবির ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস লাভলু বলেন, ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট ছিলো। পরীক্ষা নেওয়ার পর স্বাক্ষর করার সময় ওর (ইমন হাসান রাব্বি) নাম ও রোল জানতে চাইলে সে সঠিকভাবে বলতে পারিনি। একবার নিজেকে লাবিব শিকদার নামে পরিচয় দিচ্ছে, তো আরেকবার ইমন হাসান রাব্বি নামে। তখন আমি ধারণা করলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে, ওখানে হয়ত ওর নাম রয়েছে। এজন্য ভয়ের কারণে সঠিক নাম বলছে না। পরে জানা গেল সে এ বিভাগের শিক্ষার্থী-ই না।

এ বিষয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যে ২৩ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের সবার বিভাগ, হল ও পরিবারের নিকট চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তবে ইমনের নামে চিঠি দিতে গিয়ে দেখি অ্যাকাডেমিক শাখায় ওর নাম, আইডি নম্বর মিলছে না। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। পরে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সে নিয়মিত ক্লাসও করে। এ বিষয়টি আমরা বিভাগের একজন শিক্ষককে জানাই। তিনি বিভাগের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অসংলগ্ন উত্তর দিতে থাকে। নিজের নাম পরিচয় এমনকি বাবা-মার নামও ভুল বলে। পরে ওই শিক্ষক তাকে অফিস কক্ষে যেতে বললে সে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, জানতে পেরেছি সে আবাসিক হলেও থাকে। সে হলে কাদের মাধ্যমে উঠেছে এটাও আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়টিকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে আমরা তার পরিবারের ঠিকানাও পেয়েছি। তার গ্রামে আমরা পুলিশ পাঠিয়ে শনাক্ত করবো। পাশাপাশি এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করবো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।