চবিতে মিরসরাইয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মিলনমেলা

কারও পরনে শাড়ি কেউবা আবার পরেছেন পাঞ্জাবি। একসাথে জমিয়ে আড্ডায় মেতেছেন সবাই। কেউবা ব্যস্ত গল্পে কেউবা ব্যস্ত সাজসজ্জায়, আবার কয়েকজন এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে তুলছেন ছবি। দেখে মনে হচ্ছিলো জগতের সব চেয়ে সুখী ওরা। হবারই তো কথা তাদের আজ উৎসবের দিন। বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত মিরসরাইয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন মীরসরাই স্টুডেন্টস্ এসোসিয়েশনের জমকালো চড়ুইভাতিতে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের কথা।

গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) চবির অপার সৌন্দর্যের বোটানিক্যাল গার্ডেনে আড্ডা, গল্প, গান, খেলাধুলা, ভোজন— সব মিলিয়ে এ এক প্রাণবন্ত দিন কাটায় চবিতে অধ্যয়নরত মিরসরাইয়ের শিক্ষার্থীরা। শুধু শিক্ষার্থী নয় এবারের আয়োজনে ছিলো চবির মিরসরাইয়ের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। যা পুরো আয়োজনে অন্যমাত্রা যোগ করে।

প্রকৃতিতে শীতের বাতাস ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে, উঁকি দিচ্ছে বসন্ত। চবির বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকাও সাজতে শুরু করেছে নতুন রূপে। এর মাঝে চড়ুইভাতির আয়োজন—এনে দিয়েছে এক অন্যরকম আনন্দ। যা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাওয়া শুধু কষ্টকর নয় বলা চলে অসম্ভব।

এদিন সকাল থেকে চবির বোটানিক্যাল গার্ডেনে জড়ো হতে থাকে চবির বিভিন্ন বিভাগে অধ্যায়নরত মিরসরাইয়ের শিক্ষাথীরা। যেখানে ছিলো নবীন শিক্ষার্থীরাও। কুয়াশার ঘোর কাটিয়ে বেলা যখন প্রায় সাড়ে ১০টা তখন শিক্ষাথীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেন। পাখপাখালির মতো চারদিক মাতিয়ে তোলে সবাই। একদল যখন ব্যস্ত অনুষ্ঠানের সাজসজ্জায় অন্য দল ঠিক তখন গুছিয়ে নেয় রান্নাবান্নার কাজ।

বেলা আরেকটু বাড়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠানস্থনে এসে পৌঁছান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তারা একে একে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে থাকেন। আবার কয়েকজন শিক্ষক শিখিয়ে দেন কিভাবে ভবিষ্যতের পথ চলতে হবে সেসব বিষয়ে।

বেলা প্রায় ২টা থেকে শুরু হয় ভোজন। যে দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। সবুজ ঘাসের ওপর বিছিয়ে দেওয়া ত্রিপলে গোল হয়ে বসেছেন সবাই। শিক্ষকদের জন্য পাশে দেওয়া হয় চেয়ার। কিন্তু না, উনারাও জুতা মোজা খুলে বসে পড়লেন নিচে। শিক্ষার্থীদের পাশে বসে আড্ডায় গল্পে সেরে নিলেন ভোজন। যে দৃশ্য চবিতে অধ্যয়নরত মিরসরাইয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এক প্রকার নতুন এবং মহা আনন্দের।

এতটুকুতেই শেষ হয়নি সংগঠনটির আয়োজন। বিকেলে সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছিলো। একজন মাইক নিয়ে সবাইকে ডেকে পাঠান মাঝমাঠে। শুরু হয় খেলাধুলা। ২০ পেরিয়েও ওরা যেন এখনও শৈশবে। মোরগ লড়ই, বালিশ খেলা, গান,কবিতা, কুইজ—মাতিয়ে তুলে পুরো আয়োজন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সন্ধ্যার খানিকটা আগে চলে পুরস্কার বিতরণ এবং ফটোসেশন। সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশে চড়ুইভাতি, নবীন পরিচিতি এবং ছাতক্র-শিক্ষার মিলনমেলার আয়োজন সম্পন্ন করে সংগঠনটি।

এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসব মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ সহিদ উল্যাহ, জৈব রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুনিরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফউদ্দিন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা তুজ জোহরা, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল হোসেন, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পেরেও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বেনু কুমার দে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইবনুল ইনতিসারের সঞ্চালয় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে শেষ হয় সভাপতি সিবলু চৌধুরীর সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে। এতে সংগঠনটির বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী, মাশরুর কামাল অনিক, মুরাদুল ইসলাম দীপু, তোফায়েল আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান, আনিকা আনতারা রিয়াসহ সংগঠনটির অন্যন্য নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।