চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত সিন্ডিকেট ছিল সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভা। সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সভা আহ্বান না করা নিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচনা-সমালোচনা। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট নির্বাচনের প্রায় ৪ মাস পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার সভা আহ্বান করলেও তা কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই পেছানো হয় কয়েক দফা। অবশেষে গত ১৪ জুলাই সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা অনুষ্ঠিত হলেও তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা থেমে থাকেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়াত ১৫ দিনের মধ্যে কার্যবিবরণী সিন্ডিকেট সদস্যদের নিকট প্রেরণ করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সে কার্যবিবরণী প্রেরণ করা হয়নি। এ নিয়ে আবারো আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
পরবর্তীতে দীর্ঘ ৪৫ দিন পর গত ২৭ আগস্ট পাঠানো হয় ৫৪৪তম সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী। কার্যবিবরণী পাঠানোর পর নতুন করে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিন্ডিকেটে গৃহীত হওয়া বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে বিকৃত করে সদস্যদের নিকট কার্যবিবরণী প্রেরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে, ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সভার বিষয় ১৩তে কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এভাবে— “কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা হোক।” তবে কোন পদে পূর্ব থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে বা দৈনিক ভিত্তিতে কোন কর্মচারী নিযুক্ত থাকলে সেক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়মিতকরণের কোনো সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে হয়নি।
কিন্তু সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণীতে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে বা দৈনিক ভিত্তিতে কোন কর্মচারী নিযুক্ত থাকলে সেক্ষেত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বন্ধনীর মধ্যে ‘নিয়মিতকরণ’ শব্দটি উল্লেখ করা হোক—অংশটি সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সিদ্ধান্তের প্রথম অংশটি সিন্ডিকেটে গৃহীত হলেও পরবর্তী অংশ গৃহীত হয়নি। তবুও সিদ্ধান্তকে বিকৃত করে কার্যবিবরণীতে তা লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ সিন্ডিকেট সদস্যদের।
এদিকে সিন্ডিকেট সভার বিষয় ১৪তে ৯টি বিভাগ-ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নির্বাচনী বোর্ডে সদস্য মনোনয়নের জন্য উল্লিখিত বিভাগ- ইন্সটিটিউট সমূহের পরিকল্পনা কমিটির মাধ্যমে নাম প্রস্তাবের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু তা না করে ৫৪৪তম সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণীর বিষয় ১৪ এর সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট কর্তৃক সদস্য মনোনয়নের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩ এর লঙ্ঘন বলে দাবি অধিকংশ সিন্ডিকেট সদস্যদের।
এছাড়াও, বিষয় ৩০ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের নীতীমালার ব্যাপারে কেবল আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। যদিও তা সিদ্ধান্ত আকারে কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) এসব বিকৃত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এর আগেও সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী প্রেরণ করতে দেরি করার কারণে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে কার্যবিবরণী প্রেরণ করলেও তাতে সিন্ডিকেটে যা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তা বিকৃত করা হয়েছে। এমনকি সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়নি এমন বিষয়কেও কার্যবিবরণীতে সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন।
তবে এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।