চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ও ডেমু ট্রেন।
প্রতিদিন ৭ জোড়া শাটল ট্রেন ও ২ জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে ডেমু ট্রেন। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন তেইশ হাজার শিক্ষার্থী।
দীর্ঘদিন ধরে ডেমু ট্রেন বন্ধ থাকায় নগরীর বটতলী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা শাটল ট্রেনের বগিগুলোতে বেড়েছে ভিড়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল সাড়ে আটটায় ছেড়ে আসা ডেমু ট্রেনটি এখন না চলার কারণে আধা ঘন্টা আগে আসা শাটলে করে আসতে হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ আবার এক ঘন্টা আগে সকাল সাড়ে সাতটায় ছেড়ে আসা শাটলে চড়ে আসেন। ফলে দুটি শাটলে ভিড়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসনের অভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শাটলে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করছেন। এবং বগিগুলোর ভেতরে ভিড়ের পরিমাণ এতোই বেশি যে নড়াচড়া করার জায়গাটুকোও পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত উল্লাহ রোহান চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, প্রতিদিন দাঁড়িয়ে যেতে হয়। প্রতিটি বগিতে যে পরিমাণ আসন আছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী উঠে শাটলে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে এভাবে যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হয়।
ডেমু ট্রেন বন্ধ ও শাটল ট্রেনের পর্যাপ্ত বগি না থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারী শিক্ষার্থীদের। বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা আলম বলেন, ডেমু বন্ধ থাকাতে শাটল ট্রেনে অনেক বেশি ভিড় হয় এখন। ভিড়ের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে নড়াচড়া করাটাও মুশকিল হয়ে যায়। এভাবে ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে যেতে নিজেদেরকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে মনে হয় না।
ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন ক্যাম্পাসের হল, কটেজ ও মেসে বসবাস করা শিক্ষার্থীরাও। যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হল, কটেজ কিংবা মেসে থেকে শহরে গিয়ে টিউশন করান তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাব্বির রহমান সোহান দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিকেল ৩টার ডেমু ট্রেন বন্ধ থাকায় আমাকে আড়াইটার ট্রেনে টিউশনের উদ্দেশ্যে চলে যেতে হয়। যার কারণে আমার এ আধা ঘন্টা সময় অযথা নষ্ট হয়। মাঝেমাঝে ক্লাস বাদ দিয়েও আমাকে ট্রেন ধরার জন্য দৌড় দিতে হয় বলে মন্তব্য করে সে।
জানা গেছে, করোনাকালীন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চবিতে সশরীরে ক্লাস শুরু হয় গতবছরের ১৯ অক্টোবর। তার আগের দিন ১৮ অক্টোবর খোলে দেয়া হয় আবাসিক হলসমূহ। তারও দুদিন আগে ১৬ অক্টোবর থেকে পুরোদমে চালু করা হয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ও ডেমু ট্রেনগুলো। কিন্তু কিছুদিন চলার পর গতবছরের ১১ নভেম্বর থেকে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে চবির দুই জোড়া ডেমু ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
ডেমু ট্রেন বন্ধ থাকার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, শাটলের ভোগান্তি সম্পর্কে আমরা অবগত। আমরাও চাই না আমাদের সন্তানরা কষ্ট করুক। বিষয়টি সমাধান করতে আমরা রেলমন্ত্রী মহোদয় ও পূর্বাঞ্চলীয় রেল কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার আলাপ করে যাচ্ছি। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।
এ বিষয়ে রেলওয়ের চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লোকো মাস্টার সংকটের কারণে আমরা ট্রেনের শিডিউল স্বাভাবিক করতে পারছি না। আমাদেরকে সময় দিতে হবে। আন্তঃনগর ট্রেন থেকে গার্ড এনে চবির শাটলগুলোতে দিতে গেলেও ঝামেলা। পুরো দেশে ট্রেন চলাচল ব্যহত হতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের অনেক গার্ড অবসরে চলে গেছেন। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা অবসরপ্রাপ্তদের আবার দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবে রাজি হলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমাদের কিছুদিন সময় দিন। সহসাই চবির সংকট সমাধান করা হবে বলে জানান জাহাঙ্গীর হোসেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।