চবির নাট্যকলা বিভাগের উদ্যোগে মঞ্চায়িত হবে নাটক ‘কিনু কাহারের থেটার’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নাট্যকলা বিভাগের উদ্যোগে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের থিয়েটার ইন্সটিটিউটে মঞ্চায়িত হবে মনোজ মিত্র রচিত নাটক ‘কিনু কাহারের থেটার’। অসীম দাশের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বিকাল ৫টায় প্রথম প্রদর্শনী ও সন্ধ্যা ৭টায় দ্বিতীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। দর্শকরা ২০০ ও ১০০ টাকা মূল্যের টিকেটের মাধ্যমে নাটকটি দেখতে পারবেন।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় চবি সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা জানান নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অসীম দাশ।

এ সময় তিনি চবি নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি শাকিলা তাসমিন এর লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে চবির নাট্যকলা বিভাগ আগামী ১৫সেপ্টেম্বর থিয়েটার ইনস্টিটিউটয়ে আয়োজন করছে মনোজ মিত্রের বিখ্যাত নাটক ‘কিন্তু কাহারের থেটার’। করোনার দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবার পর নাট্যকলা বিভাগ নব উদ্যমে তাদের শিল্পচর্চার দ্বার উন্মোচন করেছে। চবি নাট্যকলা বিভাগ নানা প্রতিকূল প্রতিবেশ উপেক্ষা করে একাডেমিক কার্যক্রমকে সংহত রূপদানে বদ্ধ পরিকর। ধারাবাহিক শিল্পচর্চায় নাট্যকলা বিভাগ দেশ ও দেশের বাইরে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে শিল্পচর্চা বিস্তার লাভে সমর্থ হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস এই বিভাগটি ছাত্র-শিক্ষকদের কাজের পরিধি বিস্তৃত করতে দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে। আপনাদের সহযোগিতা, ভালবাসায় এই বিভাগ বিশ্বের যে কোন শিল্পতীর্থে আসীন হতে তৎপর। এই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত শ্রম সাধনায় নির্মিত হয় বিচিত্র ধারার নাট্য প্রযোজনা। নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র এদেশে নয় পৃথিবীর তাবৎ শিল্পকলায় তাদের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবে এই বিশ্বাস। নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনা ‘কিনু কাহারের থেটার”দর্শক হৃদয় ছুঁয়ে যাক। জয় হোক নাটকের, জয় হোক বাংলা থিয়েটারের।”

‘কিনু কাহারের থেটার’ নাটকের কাহিনীতে যা দেখা যাব:
বহু বছর আগের কথা! ইংরেজ শাসনের শেষ আমল। সে সময় হাটে ঘাটে মাঠে থিয়েটার করে বেড়াতো অখ্যাত কোনো গ্রামে জন্মানো এক অন্তজ, নাম তার কিনু কাহার। ভদ্রলোকদের এ থিয়েটারে আগমন ঘটতো না, নেহাতই অশিক্ষিত দরিদ্র গ্রামবাসীর অবসর কাটানোর খেলা। এমনই একদিনে কিনু কাহার ও তাঁর দলবল মিলে করবে নাটক ‘ঘণ্টাকর্ণপালা’। পুতনা রাজ্যের কাহিনি। যে রাজ্যে রাজার কোনো ক্ষমতা নেই। দুষ্কর্মের দোসররা হয়েছে আইনের পরম বন্ধু। রাজ্যের ঘটে চলা যাবতীয় অপকর্মের ভার চাপানো হয়েছে বোকা ভোম্বল ঘণ্টাকর্ণের ওপর। ঘণ্টাকর্ণও লোভী বউয়ের সাধ-আহ্লাদ মেটাতে অন্যলোকের সাজা খেয়ে বেড়াচ্ছিল। এরই মধ্যে রাজ্যের উজির এক নারীর শ্লীলতাহানি করেছেন। এ কারণে রাজ্যের লাটসাহেব খেপেছেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, “এ অপকর্মের যদি বিচার না হয়, তাহলে আমি সিংহাসন ফালাইয়া দিব”। রাজা পড়লেন উভয়সংকটে। উজির তাঁর প্রাণের দোসর, তাঁকে কী করে শাস্তি দেবেন? এদিকে আবার লাটসাহেব উজিরের সঙ্গে যোগসাজশে রাজাকে অপদস্থ করতে উদ্যত হয়।

শেষমেশ এ অপরাধেরও দায় গিয়ে ওঠে সেই বোকা ঘণ্টাকর্ণের ওপর। কিন্তু এবার আর ঘণ্টাকর্ণ মুখ বুজে তা সহ্য করে না! করে ওঠে প্রতিবাদ। শেষপর্যন্ত কার গলায় ঝুললো দড়ি তা জানতে দেখতে হবে পুরো নাটকটি। নাটকে কিনুর বারোয়ারি থিয়েটারের খোলসে সমকালের আয়না উঠে এসেছে। স্বার্থপর রাজা-উজির, বিদেশি শাসকের প্রতিনিধি, ভণ্ড সাধু যেমন শোষকের চিত্র তুলে ধরে তেমনি ঘণ্টাকর্ণ, জগদম্বা এবং উদাসিনীর মতো শোষিত মানুষের মাধ্যমে সমকাল তথা চিরকালের গোটা সমাজটাই প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে কিনু কাহারের থেটারে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।