চবির ৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নিলো প্রশাসন!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে বহিষ্কৃত ৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মানবিক বিবেচনায় এসব শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শাস্তি পূর্ণ হবার আগে বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, এভাবে বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়া মানে তাদের ফের উচ্ছৃঙ্খল হতে উষ্কে দেওয়া! যার প্রমাণ অতীতেও পাওয়া গেছে।

রোববার (১৩ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর ড. নূরুল আজিম শিকদার। গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ এন্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ এন্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব ও প্রক্টর ড. নূরুল আজিম শিকদার বলেন, পুনঃতদন্তের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কোন ৯ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তা খোলাসা করেননি প্রক্টর।

প্রক্টর বলেন, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে পুনঃতদন্তের আবেদন জানিয়েছিল। এরপর পুনঃতদন্ত কমিটি করা হয়। পুনঃতদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে!

সে নয়জন শিক্ষার্থী কারা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা এখন বলতে পারব না। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আরও একটি মিটিং হবে। সে মিটিংয়ের পর বলতে পারব।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারকৃতরা শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপগ্রুপ বিজয় পক্ষের মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী। যারা বহিষ্কারের পরও অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, থেকেছেন হলে। তবে কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।

এদিকে শাস্তির মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলেন, ক্ষমা তাদের জন্য যারা ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু বহিষ্কৃত এসব শিক্ষার্থীরা কতটুকু সংশোধন হয়েছেন সেটা একটা বড় প্রশ্নের জায়গা। তাছাড়া আমরা আগেও দেখেছি বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার পর ফের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন অনেকে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেটাকে ‘মানবিকতা’ বলছে সেটা আরও অপরাধে জড়াতে ‘উষ্কে’ দেওয়া। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বন্ধ হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক থাকুক।

জানা গেছে, অতীতেও বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার পর ফের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সে বছরের ডিসেম্বরে বহিষ্কৃত ৭ জনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। আর সেই ৭ জনের মধ্যে একজন ছিলেন আইন বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খালেদ মসুদ। যে গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও একটি অনলাইন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধরের ঘটনায় জড়িত ছিলেন। চবির ইতিহাসে এমন আরও অনেক নজির আছে যারা ক্ষমা পেয়েও সংশোধন হননি; বরং অপরাধের মাত্রা বাড়িয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি সাংবাদিক হেনস্তা, ছাত্রী হলে মারধরসহ পৃথক ছয় ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতদের ১৭ জন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তবে এদের মধ্য থেকে শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।