চবি হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির দুই সদস্যের পদত্যাগ

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারীরা হলেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী ও আইন বিভাগের অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে হলুদ দলের আহ্বায়কের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, “দুই সদস্য পদত্যাগপত্রের সফটকপি আমাকে পাঠিয়েছেন। ফোনও দিয়েছেন। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়াতে হার্ড কপি পাইনি। গণতান্ত্রিক পন্থা অনুযায়ী যে কেউ পদত্যাগ করতে পারে। আগামীকাল হার্ড কপি হাতে পেলে সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে পারবো।”

আহ্বায়ক বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে পদত্যাগকারীরা উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুন দল) দুই বৎসর মেয়াদী স্ট্যান্ডিং কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে হিসেবে বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটির মেয়াদ বিগত ২০১৯ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। অধিকন্তু পাঁচ সদস্য অবসর গ্রহণ, লিয়েন, বিদেশ গমন প্রভৃতি কারণে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এছাড়া যে ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন, সে ক্যাটাগরি বর্তমানে ধারণ না করার কারণে দু’জন সদস্যের দায়িত্ব পালনও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাছাড়া স্ট্যান্ডিং কমিটিতে বর্তমানে আক্ষরিক অর্থেই দু’টি অনুষদ প্রতিনিধিহীন আছে।

তারা আরও উল্লেখ করেন, প্রায় ছয় বছর আগে দু’বছরের জন্য নির্বাচিত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যবৃন্দ তাদের কার্য মেয়াদের চার বছর পর দলের বর্তমান সাধারণ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বশীল হতে পারেন না। অপ্রতিনিধিত্বশীল স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে মনোনয়ন প্রাপ্তদের বিভিন্ন নির্বাচনে ভরাডুবিই প্রমাণ করে যে, দলের বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটি বর্তমান হলুদ দলের সাধারণ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বশীল নয়, তাঁরা দলকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং দলের বর্তমান নেতৃত্ব একতা ও আদর্শিক প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে পারছে না।

দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে অনিবার্য কারণে জরুরী প্রয়োজনে সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে স্ট্যান্ডিং কমিটির মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। দল পরিচালনার নীতিমালার (চ) ধারাটি এরূপ “অনিবার্য কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করা না গেলে চলমান স্ট্যান্ডিং কমিটির বর্ধিত মেয়াদ দলের সাধারণ সভায় অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। তবে বর্ধিত মেয়াদ তিন মাসের বেশি হতে পারবে না। যদি এ বর্ধিত সময়ে নির্বাচন করা না যায় তাহলে স্ট্যান্ডিং কমিটি বিলুপ্ত হবে এবং আহ্বায়ক একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবেন, সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তারা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিগত ২০১১ সালের পর অদ্যবধি দলের যতগুলো সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার কোনটিতেই এরূপ কোন বিষয় আলোচিত হয়নি বা এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়নি। সেসব বিবেচনায় আমি মনে করি দলের বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটি কার্যকর থাকার কোন নৈতিক ভিত্তি নেই। তাই স্বেচ্ছায় দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই সদস্য।

প্রসঙ্গত, প্রতি দু’বছর পর পর সংগঠনটির স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৭ সালের পর আর নির্বাচন হয়নি। ৫ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়েছেন দলটির সদস্যরা। এর মধ্যে গত বছরের ১২ নভেম্বরে স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন দেয়ার আহবান জানিয়ে চিঠি দেন ২০১ জন শিক্ষক। এর মধ্যে পদত্যাগ করা এই দুই শিক্ষকের স্বাক্ষরও ছিল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।