চম্পাকে খুন করে পাহাড়-জঙ্গল মাড়িয়ে এনাম আশ্রয় নেয় মাজারে

বেসরকারি মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ’র রাঙ্গুনিয়া ব্রাঞ্চের সহকারী ব্যবস্থাপক চম্পা চাকমাকে (২৮) খুনের পর অভিযুক্ত এনাম প্রথম রাত ছিল পাহাড়ের জঙ্গলে। তারপর চট্টগ্রাম-ঢাকা হয়ে আশ্রয় নেয় সিলেট হযরত শাহজালালের মাজারে। কিছু দিন মাজারের থাকার পর জৈন্তাপুর থানার আসামপুর এলাকায় একটি খাবার হোটেলে চাকুরি নেয় এনাম। সেখানে দৈনিক ২০০ টাকা বেতন ছিল তার।

এনামকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন র‌্যাব-০৭এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম। এসময় র‌্যাব-০৭এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার, কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব-০৭এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, চম্পা রানী চাকমার হত্যাকাণ্ডে তিন পার্বত্য জেলা ও রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হয়েছে। পাহাড়ে যাতে এই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব না পড়ে সেজন্য আমরা দ্রুত খুনিকে আইনের আওতায় আনতে মাঠে নামি। কিন্তু প্রথম ১৫ দিন তার সাথে কোনো রকম ডিভাইস ছিল না। তার অবস্থান জানা যাচ্ছিলো না। পরে আমরা অন্যভাবে খবর নিয়ে জানতে পারি সে সিলেট আছে।
তখন র‌্যাব সিলেটের সহযোগিতায় আমরা তার অবস্থান নিশ্চিত হই। তাকে জৈন্তাপুর থানার আসামপুর এলাকায় একটি খাবার হোটেল থেকে কর্মরত অবস্থায় আমরা গ্রেপ্তার করি।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর এনাম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছিল পাহাড়ে যাওয়ার কথা বলে। তার কথাবর্তায় বোঝা গেছে সে পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই খুন করেছে। আমরা তাকে থানায় সোপর্দ করছি।

র‌্যাবের কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর সে প্রথম রাত পাহাড়ের জঙ্গলে কাটায়। পর দিন পালিয়ে চট্টগ্রাম নগরে এসে চকবাজার, পতেঙ্গা এলাকা আত্মগোপনে থাকে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা গিয়ে ছিল কয়েক দিন। এরপর সিলেট হযরত শাহজালালের মাজারে গিয়ে ছিল। পরে দৈনিক ২০০ মজুরীতে সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের আসামপুর এলাকায় একটি ভাতের হোটেলে চাকরি নিয়েছিল।

জানা গেছে, এনামুল হক গত বছর ২০ এপ্রিল পদক্ষেপ নামের এনজিও থেকে তার মায়ের নামে দুই লক্ষ টাকা এবং তার বোনের নামে এক লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। এনামুল তার মায়ের লোনের ৪০ কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করলেও তার বোনের নামে নেওয়া ঋণের ৬টি কিস্তির টাকা পরিশোধ করছিল না যেগুলো প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা ছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত তারিখে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ভিকটিম চম্পা চাকমা আসামি এনামুলকে বারবার কিস্তি পরিশোধের তাগিদ দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।

গত ৫ মার্চ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে চম্পা চাকমা এবং তার সহকর্মী একত্রে অফিস থেকে যাচ্ছিলেন। পথে রাঙ্গুনিয়া থানাধীন ধামরাইহাট এলাকায় তাদের সাথে এনামুলের দেখা হলে তাদের মধ্যে লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধ সংক্রান্তে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এনামুল তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম চম্পা চাকমার গলায় শ্বাসনালীতে আঘাত করে পালিয়ে যায়। চম্পা চাকমার অফিসের সহকর্মীরা এবং আশেপাশের লোকজন তাকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তার ভগ্নিপতি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত চম্পা চাকমার ভাই মিন্টু চাকমা বলেন, আমি সবার ছোট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে ৪র্থ বর্ষে পড়ছি। চম্পা দিদির আয়ে আমাদের পরিবার চলতো। আমার বোনকে হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা নির্বিকার। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।