চরম ফলাফল বিপর্যয়ে ঐতিহ্য হারাচ্ছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ লংগদু সরকারি মডেল কলেজ। এবারের এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় জেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলো চোখ ধাঁধানো ফলাফল অর্জন করলেও কলেজটির ফলাফলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। আশংকাজনক হারে বেড়েছে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ অভিভাবকদের।
জানা গেছে, শুধু লংগদু উপজেলার নয় পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীরাও অধ্যায়ন করছেন কলেজটিতে। এবারের এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় কলেজটি থেকে বিভিন্ন বিভাগের ৩১০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে অনুত্তীর্ণ হয়েছে ২৮২ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কোনো শিক্ষার্থী নেই। সর্বমোট পাস করেছে ২৮ জন। অথচ এ কলেজে অনেক শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ ৫ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, এবার নির্বাচনী পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ২৩৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন ব্যবসায় শাখায় ৪০ জনে ৫ জন এবং বিজ্ঞানের ৩৩ জনে জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছে। সরকারি কলেজে এমন ফলাফল ধসে বিব্রত অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা। এজন্য তারা নিয়মিত পাঠদান না হওয়া এবং শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ ও অনুপস্থিতিকে দায়ী করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে নিয়মিত ক্লাস হয় না। ছাত্ররা আসে আর যায়। শিক্ষকরাও ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক নয়। পাঠদানও ভালো হয়না। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে যায় না। এবারের ফলাফল বিপর্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইংরেজি বিষয়ে অধিকাংশ অকৃতকার্য হওয়া বলেও জানান তিনি।
ফলাফল বিপর্যয়ের খবরে হতাশ দ্বাদশ শ্রেনীর অভিবাকরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক অভিবাবক বলেন, অত্যন্ত সুনামধন্য ছিল এই কলেজটি। আমিও পড়েছি এ কলেজে। এখন ছেলে মেয়েদের পড়তে পাঠিয়েছি। কিন্তু ফলাফল এমন হলে আমাদের সন্তানদের ভবিষৎ কি হবে?
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকদের গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, নিয়মিত ক্লাস না নেয়া ও অভিভাবকদের অসচেতনতার এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণি পাঠদানে অনুপস্থিতি ও অমনযোগী এসব কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির চেয়ে শিক্ষকদের মধ্যকার দলাদলি, কলেজ টিচার্স কাউন্সিল গঠন নিয়ে রাজনীতিকরণ, সর্বোপরি শিক্ষার্থীরা শ্রেণি পাঠদানে অনিয়মিত থাকলেও নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ এ বিপর্যয়ের কারণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত শিক্ষাদান ও ভাল ফলাফল অর্জনে লংগদু সরকারি কলেজ পিছিয়ে পড়ছে। এর প্রধান কারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাসবিমুখ হওয়া। নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হওয়া। এ থেকে মুক্তি পেতে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ক্লাসমুখী করতে হবে। একই সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
কলেজের ইংরেজি প্রভাষক মো. মহসিন বলেন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শিখানোর প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল। তবে এ ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেসিক ভালো না থাকায় এবং ক্লাসে অনিয়মিত-অমনযোগী থাকার কারণে তারা নির্বাচনী পরীক্ষায় ভালো করতে পারিনি। তবে পরবর্তী পরীক্ষায় যেন ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ফলাফল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে লংগদু সরকারি মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আজগর আলী বলেন, আমরা আমাদের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট না, এ ফলাফল থেকে কিভাবে উত্তরণ সম্ভব তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকিব ওসমান বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় এত বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ফেল করার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।