চট্টগ্রাম বিশাববিদ্যালয়ের (চবি) স্যার এ এফ রহমান হলে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ বিজয়। তবে কিছু কক্ষে আরেক পক্ষ ভিএক্স- এর নেতাকর্মীরা থাকতেন। হলটিতে বিজয় গ্রুপ নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চিকা মেরে রেখেছিলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘নিরবতা’ চিকার বিষয়টি নিয়ে নানান সমালোচনা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। এবার বিজয় গ্রুপের চিকার পাশে নতুন করে চিকা মারে ভিএক্স গ্রুপ। বিষয়টি পছন্দ হয়নি বিজয় পক্ষের নেতাকর্মীদের। এর জের ধরে ‘শীতের রাতে’ সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হলেও ‘মূল ঝড়’ যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের কক্ষের ওপর।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১০টা থেকে হঠাৎ সরাগম হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হল। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মুহূর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চবি। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতেই চলে চার ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও ভাংচুর করা হয়েছে এ এফ রহমান হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর ও দায়িত্বরত সাংবাদিকদের হত্যার হুমকিও দেন বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
সরজমিনে দেখা গেছে, দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে দাওয়া পাল্টা ও ইট পাটকেল মারার ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেলের শব্দ শুনা যায়। এছাড়া আবাসিক হলের রুম ভাংচুর ও দেশীয় আস্ত্রের ঝনঝনানিতে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ক্যাম্পাসে। পরে রাত ২টার দিকে পুলিশে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে কক্ষ ভাংচুর ছাড়াও হয় ব্যাপক লুটপাট। দুই পক্ষের দাবি, একাধিক কক্ষ থেকে চুরি হয়েছে নগদ অর্থ, ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টানা চার ঘন্টা ধরে চলা সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হননি। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। সহকারী প্রক্টররা ঘটনাস্থলে সাথে সাথেই উপস্থিত হয়। কিন্তু আমরা যখন এক পক্ষের সাথে এর সমাধান নিয়ে কথা বলতেছিলাম তখন অন্য পক্ষ পেছন থেকে হলে আক্রমণ করেছে। তাই আমাদের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় বিদ্যমান দুটি পক্ষই দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের উপর। বিজয় গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক নয়ন চন্দ্র মোদক বলেন, আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভিএক্সের ছেলেপেলেরা আমাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করেছে। অপরদিকে ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মারুফ ইসলাম বলেন, আমরা এ এফ রহমান হলে আমাদের কর্মীদের নিয়ে একটি মিটিং করতেছিলাম। এসময় বিজয়ের ছেলেরা আমাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করেছে।
এ ঘটনায় এ এফ রহমান হলের সব ধরনের চিকা মুছে ফেলা ও হল ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, চিকা নিয়েই যেহেতু ঝামেলা হয়েছে সেহেতু এ এফ রহমান হলের সব ধরনের চিকা প্রশাসনের পক্ষ হতে মুছে ফেলা হবে। ধীরে ধীরে অন্যান্য হলেও চিকা মুছে ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া যারা হল ভাংচুর ও হলের সম্পদ নষ্ট করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আশ্বাস কতটা কার্যকরী হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা। নাম না প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, এবাবে হলে আসন বরাদ্দ না দিয়ে রাখলে তো সবাই চাইবে জোর খাটাতে। আর তখন ঘটবে সংঘাত। এতে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হয় তেমনি রাষ্ট্রের সম্পদও নষ্ট হয়।
তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখতে প্রশাসনের আরও কার্যকরী ভুমিকা গ্রহণ করা উচিত।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।