ছিনতাইয়ের মানতে বাধ সাধলো পুলিশ

চার যুবকের একটি গ্যাং, দিনের বেলায় ওরা থাকে বিশ্রামে। রাত হলেই তারা মিলিত হয় পূর্ব নির্ধারিত স্থানে। রাতের বেলায় বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে করে ছিনতাইয়ের কাজ। ছিনতাই করা গাড়ি ব্যবহার করেই নগরীতে ঘুরে ঘুরে লুটপাট, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, ছিনতাই করে বেড়ায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এটি সাউথ আফ্রিকান একটি সিনেমার দৃশ্য। ঠিক সেই দৃশ্যের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের জালে ধরা পড়লো চার ছিনতাইকারী।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে এই চক্রকে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। এসময় সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহার করা প্রাইভেটকার ( চট্টমেট্রো-গ-১১-৩৯৫৬ ), ১০ টি মোবাইল, ১টি ট্যাব, দেশীয় অস্ত্র, চার রাউন্ড কার্তুজ এবং নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ বেশ কিছু মালামাল।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, বেলাল হোসেন আসলাম (২৭), তানভির ইসলাম রুকন (২৭), মোঃ সোহেল (৩০) ও কামাল উদ্দিন (২৮)। পুলিশ জানায়, তাদের প্রত্যাকের নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, নারি ও শিশু নির্যাতন আইনের ডজনের উপর মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) মোখলেছুর রহমান বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, আসামিরা গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সীতাকুণ্ড যাওয়ার কথা বলে পাহাড়তলী থানাধীন অলংকার মোড় থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে। ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডে আসার পর আসামীরা প্রাইভেট কারের ড্রাইভার ইলিয়াসকে (৩০) জিম্মি করে। ইলিয়াসের বাবার মোবাইলে ফোন করে প্রাইভটকারটি ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চালকের বাবা অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা ড্রাইভার ইলিয়াসকে পুরো দিন মারধর করে। রাত প্রায় ৮ টার সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চালকের বিকাশ নাম্বারের পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।

তারপর ছিনতাই করা প্রাইভেটকার নিয়ে ফটিকছড়ি গিয়ে মাজার জিয়ারত এবং মোটা অংকের টাকা মানত করে ছিনতাইয়ে সফল হওয়ার নিয়তে। কেউ যেন সন্দেহ করতে না পারে সেজন্যে দিনের বেলায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে তারা কারটি পার্কিংয়ে রাখতো এবং রাত হলে তারা এই ছিনতাই করা গাড়ি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ছিনতাই করতো।

৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ অক্সিজেন কাঁচাবাজারের একটি ফার্মেসি থেকে তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। এ বিষয়ে দোকান মালিক বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

পুলিশ জানায়, বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করা হয় এবং আসামিদের ছবি নিয়ে পুলিশ অভিযানে নামে।

ওসি বায়েজিদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বায়েজিদ লিংক রোড ফৌজদারহাটের দিকে থেকে আসা বায়েজিদ থানার আরেফিন নগর চেকপোস্টে গাড়িটি আটক করা হয়। এ সময় ছিনতাইকৃত গাড়িসহ গাড়িতে থাকা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে অস্ত্র, গুলি, চুরির মালামাল উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত ছিলেন, এডিসি নর্থ আরাফাতুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শাহ আলম, ওসি বায়েজিদ মো. কামরুজ্জামানসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।