ছেলের জীবন বাঁচাতে কিডনি দিলেন বাবা

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. লিয়াকত আলী (২০)। পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রামের বাকলিয়া কলেজে। এক বছর আগে লিয়াকতের মা-বাবা জানতে পারেন, তাদের ছেলের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাদের মাথায়। লিয়াকতের বাবা একজন ব্যবসায়ী। নিজের সম্বল ও ভাড়া বাসার টাকায় গত এক বছর লিয়াকতের চিকিৎসা ও ডায়ালাইসিস করে আসছে।

ডাক্তার জানিয়েছিলেন, তাকে বাঁচাতে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এতে অপারেশন বাবদ লাগতে পারে কয়েক লাখ টাকা। গত এক বছরে পুরো পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন প্রায় ২০ লাখ টাকা। চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। অবশেষে বাবা জবুর আহমেদ তার সন্তানকে বাঁচাতে তার শরীর থেকে একটি কিডনি দেওয়ার জন্য মনস্থির করেন। পরিবারের ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট লিয়াকত।

গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুর ঢাকার শ্যামলী এলাকার একটি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। এর তিন মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি হন তারা। সেখানেই কিডনি প্রতিস্থাপনের পর বাবা ও ছেলেকে আইসিইউতে রাখা হয়। এখনও তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন, অপারেশন পরবর্তী ১৫ দিন হাসপাতালেই থাকতে হবে তাদের। এরপর আগামী ৩ মাস ঢাকায় থেকে নিয়মিত চেক আপ করাতে হবে।

এবিষয়ে মো. লিয়াকত আলীর ভাই মোহাম্মদ আলী জাবেদ বলেন, বাবা লিয়াকতের জন্য কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিডনি দেওয়ার জন্য তিনি সাহসীও ছিলেন। পরে পরিবারের সব সদস্য তাঁকে সমর্থন করেন। এসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। তিনি সহায়তা দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা।

মোহাম্মদ আলী জাবেদ বলেন, এমন বাবা পেয়ে এবং তাঁর মতো মানুষের সন্তান হতে পেরে আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছি। আশা করি, আমার ভাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং আমার বাবার জন্য দোয়া চাচ্ছি সকলের কাছে।

এদিকে, বৃদ্ধ বয়সে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে ছেলেকে নিজের কিডনি দান করার মতো ত্যাগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।

সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা বলেন, এটি শুধু ছেলেকে বাবার কিডনি দেওয়া নয়, বর্তমান যুগে একটি অনন্য নজির। যা আমাদের এই সমাজে বাবা সন্তান এবং পরিবারের মধ্যে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।