মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে হলো চিকিৎসা সেবা অন্যতম। এই চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষ সুস্থ্য থাকতে চায় তেমনি অসুস্থ হলে চিকিৎসকদের সেবা গ্রহণ করে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো সরকারি হাসপাতাল, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্থানীয় ক্লিনিকেই সেবা নিয়ে থাকেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামের গর্ভবতী নারীরা এলাকার উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরামর্শের পাশাপাশি ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু জনবল-সংকটে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান ভেঙে পড়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানদারেরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে সদরের বা শহরের হাসপাতালগুলোতে।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র আছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো দেখভালের দায়িত্ব পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের। অন্যদিকে স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এবং উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (ডিপ্লোমা), একজন ভিজিটর, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া এবং একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা। কিন্তু পদ থাকলেও কেন্দ্রগুলোতে কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই।
এমনই একটি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সন্ধান মিলে উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইয়ারংছড়ি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থাও নাজুক। জানালা-দরজা ভেঙে যাচ্ছে। ভেতরের আসবাবও ঘুণে ধরেছে। শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থাই নেই। অবকাঠামো দেখে বুঝার সুযোগ নেই এটি একটি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র। জরাজীর্ণ ঘরে দেখা মিললো ফার্মাসিস্ট কিশোর কুমার দে’র।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, পিয়ন নেই। নিজেকেই সবকিছু করতে হয়। এ কারণে এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ আমার যতটুকু সম্ভব সেবা দেওয়া চেষ্টা করছি।
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসক না থাকায় সঠিক রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা ফলে তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে চাইলেই আমরা যাতায়াত করতে পারি না। অতিরিক্ত খরচ বহন করে সদরের সাথে সড়ক পথে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম মোটরসাইকেল। মহিলা রোগীদের জন্য এবং রাতের বেলায় যাতায়াতের কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই।
ইয়ারংছড়ি গ্রামের আরিফা আক্তার বলেন, ‘আমার শারীরিক কিছু সমস্যা নিয়ে স্থানীয় উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাই। সেখানে কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা কিংবা সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় কর্মরত ফার্মাসিস্টকে দেখাই। কিছুদিন পর অবস্থার অবনতি হলে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিই।
দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী জনবল-সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, শূন্য পদে জনবল নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চাহিদানুযায়ী সুযোগ-সুবিধা না থাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। তাঁরা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান বলেন, এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।