সেতুর পিলারে বিভিন্ন স্থানে রড বেরিয়ে ধরেছে মরিচা। ভেঙে গেছে রেলিং। কংক্রিটের ঢালাইয়ে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত করা হয়নি। আর বিকল্প না থাকায় এলাকার লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়েই পারাপার হচ্ছে। এটি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি বাজার সংলগ্ন সেতুটির জরাজীর্ণ চেহারা।
উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি করল্যাছড়ি বাজার সংলগ্ন স্থানীয় খালের ওপর সেতুর অবস্থান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে নব্বই দশকে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এটির দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট এবং স্পেন সংখ্যা ৭টি ও পিলার রয়েছে ৬টি। সর্বপরি ইট পাথরের কংক্রিটে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির উলম্বাকৃতির পিলারে ভাঙন ধরেছে। দুপাশের রেলিং ভেঙে গেছে। সেতুর মাঝামাঝি বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
স্থানীয় খালটি ওই এলাকায় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খালের দু’পারেই বেশ কয়েকটি গ্রাম অবস্থিত। ভাঙ্গামোড়া, যাত্রামোড়া, লেমুছড়ি, দক্ষিণ ইয়ারাংছড়ি, বটতলা গ্রামের লোকজন সহ দৈনন্দিন প্রয়োজনে উপজেলাগামী লোকজন সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের এ সেতু পার হয়ে আটারকছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ, উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং স্থানীয় করল্যাছড়ি বাজারে আসতে হয়। সেতুটি এড়িয়ে যাতায়াত করতে হলে তাঁদের পশ্চিমে ৪-৫ কিলোমিটার এবং পূর্বে ৩ কিলোমিটার হয়ে ঘুরে আসতে হয়।
মোটরসাইকেল নিয়ে করল্যাছড়ি বাজার থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলেন মনির হোসেন (২৪)। তিনি বলেন, ‘১ যুগেরও বেশি সময় ধরে সেতুর এই অবস্থা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে কাছে বারবার বলেছি। এখনো কোনো ফল পাইনি।’
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান বলেন, ‘মাঝেমধ্যে অফিসের লোকজন আইসা গজ ফুট ধইরা মাইপা নিয়া যায়। সাংবাদিকেরা আইসা ছবি তুলে। কিন্তু সেতুর কোনো উন্নতি হয় না।’
বটতলা গ্রামের বাসিন্দা মোটরসাইকেল চালক মাসুদ বলেন, এই সেতু দিয়ে গাড়ি নিয়ে এলে বিপদে পড়তে হয়। যাত্রীরা অনেক সময় ভয়ে নেমে যায়। আতঙ্কে থেকে গাড়ি চালাতে হয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের বটতলা এলাকার প্রধান সড়কের সেতুটিরও একই বেহাল দশা!
আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় চাকমা মিত্র বলেন, ‘এলাকাবাসীর কথা কী বলব? আমি নিজেই তো এর ভুক্তভোগী। এলজিইডি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। কাজটি বাস্তবায়িত হলে আমাদের দুর্ভোগের অবসান হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, করল্যাছড়ি বাজার এলাকায় নতুন সেতু নির্মাণের এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে হাজাছড়া-বটতলা হয়ে করল্যাছড়ির সঙ্গে প্রধান সড়কের কাজ দ্রুত শুরু হবে। সড়ক হলে সেতুও হয়ে যাবে। তবুও সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।