বেলাল, নেই কোন সহায় সম্বল। মাথা গোঁজার ঠাঁই যেইটুকু ছিল তাও শেখ হাসিনা সাবমেরিন নৌঘাঁটি সংযোগ সড়কের উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
পরে কখনো আত্মীয়ের বাসায় আবার কখনো বাসা ভাড়া করে থাকতেন কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা সাগর পাড়ের জেলে বেলাল উদ্দিন।
এভাবে দীর্ঘদিন দিন কেটে দেওয়ার পর আবারও মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ছোট্ট একটি ঘর নির্মাণ করেন মগনামার সাগর পাড়ের বেড়িবাঁধের কিনারায়। উচ্ছেদ হওয়া অনেক পরিবার সরকারি ঘর পেলেও মেলেনি তার কপালে।
গত ত্রিশ বছর সাগরে মাছ ধরেন বেলাল উদ্দিন। তিনি অন্যান্য জেলেদের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। বেশি রোজগারের আশায় সব জেলেরা যখন সন্তানদের মাছ ধরতে নামিয়ে দেয়, বেলাল উদ্দিন তখন তার চার সন্তানকে স্কুল-মাদ্রাসায় পাঠান।
বেলাল উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের রাহাতআলী পাড়ায়। এক সময় কৃষি কাজ করলেও বর্তমানে মাছ ধরাই তার পেশা। ছোট্ট একটি নৌকা আর জাল নিয়ে মগনামা – কুতুবদিয়ার মোহনায় বছরের পর বছর মাছ ধরছেন তিনি। সারারাত জাল ফেলে মাছ ধরেন। সকালে কূলে ভেড়ান নৌকা। এ যেন জলে ভাসা জীবন।
বেলাল উদ্দিনের চার সন্তানের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি তিনজন পড়ালেখা করছে স্কুল মাদ্রাসায়। মেজ মেয়ে রহিমা বেগম স্থানীয় একটি সিনিয়র মাদ্রাসায় আলীম দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন।
দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে হেফজ মাদ্রাসায় ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল মাদ্রাসা থেকে ছেলে মেয়েরা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পেলেও পড়া লেখার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখেনি বেলাল উদ্দীন।
জেলে বেলাল উদ্দিন বলেন, এমন অল্প রোজগারে খুব টানাপোড়েন সংসারে। তবুও সন্তানদের পড়াশোনা থামাতে চাই না কখনও। সন্তানরা পড়ালেখা করে বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, একদিন সকল দুঃখ কষ্ট সাগরের জলেই ধুয়ে মুছে আসবে নতুন দিন। সেইদিনের অপেক্ষায় আজও জলের বুকে বেয়ে চলে আমার জীবন যুদ্ধের নাও।
মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বলেন, বেলাল একজন পরিশ্রমী মানুষ। সে নিজে কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছে। একজন বেলাল উদ্দিনের জীবন অন্যান্য জেলেদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
পেকুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন বলেন, মগনামার বেলাল একজন প্রকৃত জেলে। তাকে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও অন্য কোন সুযোগ আসলে তার কথা আমাদের নজরে থাকবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।