জুমার নামাজের খুতবা শোনার ফজিলত

মুলমানদের সপ্তাহের সেরা দিন শুক্রবার তথা জুমার দিন। এটি পৃথীবির অন্যতম তাৎপর্যবহ দিবস। জুমা নামে পবিত্র কোরআনুল কারিমে একটি সূরা আছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ : ‘মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: জুমআ, আয়াত: ৯)

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ : ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা: জুমআ, আয়াত: ১০)

শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।

আমরা কি কখনো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি কেন অন্যান্য ওয়াক্তিয়া নামাজের চেয়ে জুমার নামাজ ব্যতিক্রম? কেন এ নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি? এ নামাজের রয়েছে অনন্য এক বৈশিষ্ট্য। তা হলো খুতবা।

আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর গুণ বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওপর সালাত, মুসলিমদের জন্য দোয়া ও তাদের নসিহত ও স্মরণ করানোর নামই হলো খুতবা। খুতবায় ইমাম উপস্থিত মুসল্লিদের উপদেশ দিয়ে থাকেন, নসিহত করে থাকেন, সমাজ সংশোধনের কথা বলে থাকেন। আজকের জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত মধ্যকার সময়ে কী করণীয় আছে এসব বিষয়ে ইমাম দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আর জুমার খুতবার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক যেমন মজবুত হয় তেমনি আত্মিক উন্নয়নও সাধিত হয়।

খুতবা দেওয়া নামাজেরই অংশবিশেষ। তাই জুমার ও ঈদের খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়। তবে মুসল্লিদের জন্য খতিবগণ মাতৃভাষায় খুতবার মূল বক্তব্যটুকু তুলে ধরেন। এতে উপস্থিত শ্রোতা ও মুসল্লিদের জ্ঞান লাভ হয়।

রাসূল সা:-এর খুতবাদানের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সা: যখন খুতবা দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত, তাঁর কণ্ঠস্বর উঁচু হতো এবং তাঁর ক্রোধ কঠিন হতো। এমনকি মনে হতো তিনি যেন আসন্ন শত্রুসেনার আক্রমণের সতর্ককারী। (মুসলিম, আস-সহিহ ২/৫৯২) এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর খুতবাই হচ্ছে রাসূল সা:-এর খুতবার বৈশিষ্ট্য। তাই খুতবা হওয়া উচিত সামাজিক পরিস্থিতি, সমসাময়িক ঘটনা, সামাজিক ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে ভরপুর।

জুমার দিন জুমার নামাজের আগে খতিবের খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন মুসল্লিদের জন্য কথাবার্তা বলা নিষেধ। নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করলে আমরা জুমার খুতবার ফজিলত সম্পর্কে ধারণা পাই-

হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করল, এরপর জুমায় গেল, নির্ধারিত সালাত আদায় করল, মন দিয়ে খুতবা শেষ পর্যন্ত শুনলো, এরপর ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করল, তার সেই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি-৮৮৩, মুসলিম-৮৫৭)।

জুমার দিন যে বিষয়টি আমাদের মনে রাখা জরুরি- যারা খুতবা শুরু হওয়ার পরে এসে তাড়াহুড়া করে সামনে আসতে চেষ্টা করে, হাদিস শরিফে তাদের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।

ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি জুমার জামাতে পরে এসে লোকজনের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে স্থান নিতে চেষ্টা করে সে যেন নিজের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার একটি সেতু নির্মাণ করলো।

ইমাম আহমদ (র.) বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন, এ সময় এক ব্যক্তিকে উপবিষ্ট লোকদের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেখে অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ওহে! বসে পড়, দেরিতে এসেছ এবং অন্যদের কষ্ট দিচ্ছ।

এছাড়া খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলাও অনর্থক। (বুখারি, হাদিস নং: ১/১২৮, ৮৯২; মুসলিম, হাদিস : ২০০৫ )

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।