পাখির কিচির-মিচির, মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা আর খাবারের সন্ধানে যেখানে সেখানে অবাধ বিচরণ দেখতে সবারই ভালো লাগে। এমনই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পরিযায়ী পাখির দেখা মিলছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিলে। এ বিলটিকে এখন অনেকেই পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম বলেই জানেন। উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের কাট্টলী বিল এখন হয়ে উঠেছে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল। এর পাশাপাশি অন্যান্য ছোট বড় বিলগুলোরও ঠিক একই চিত্র।
রাঙামাটি জেলায় কোন হাওর-বাঁওড় না থাকলেও এখানে রয়েছে বিশাল আকৃতির কাপ্তাই হ্রদ। এরই অংশবিশেষ কয়েকটি বড় বিল হলো রাঙামাটি বিল ও কাট্টলী বিল। এছাড়াও লংগদু উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেখার মতো অনেক ছোট বড় বিল। লংগদুরের এসব বিলে অতিথি পাখিদের জন্য আবহাওয়া অনুকূল আর পর্যাপ্ত খাবার থাকায় এবারেও শীতের সময় প্রতিবছরের ন্যায় লাখ লাখ অতিথি পাখির দেখা মিলছে।
শীতকালে সোলি, বদর, লালমোন, শামুকখোল, বক, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, কাইয়ুম ও বাগাড়িসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির ডাকে ওইসব বিলের সর্বত্রই মুখরিত থাকে। বিলের দেশি ছোট ছোট মাছই মূলত এসব পাখির প্রধান খাদ্য। বর্তমানে কাট্টলী বিলে বিচরণ করা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা লক্ষাধিক হবে বলে স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের ধারণা।
বিলটি সদরের কাছকাছি হওয়ায় এবং দৃশ্যমান ওয়াচ টাওয়ার থাকায় সেখানে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল দর্শনার্থী যাচ্ছেন পরিযায়ী পাখির কলতান, নীলাকাশে ডানা মেলে উড়ে চলার মতো মোহময় দৃশ্য উপভোগ করতে। সংবাদ পেয়ে এরই মধ্যে লংগদু উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও অগণিত দর্শনার্থী ওই বিলের মুগ্ধকর পরিবেশ পরিদর্শন করেছেন।
ভ্রমণপ্রেমীরা সেখানে একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে এত পাখি দেখে উচ্ছ্বসিত। নীলাকাশে পাখির অবাধ বিচরণের দৃশ্য এবং কাপ্তাই হ্রদের নীলাভ জলধারার সৌন্দর্য ধারণ করে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
পরিবেশবিদরা মনে করেন কাট্টলী বিলে পাখির অভয়ারণ্য তৈরি ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই। এই বিলকে সরকারি ভাবে পাখির অভয়ারণ্য স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রূপের রাণী রাঙামাটির সৌন্দর্য আরও একধাপ এগিয়ে নেয়া হোক।
প্রসঙ্গত, শীতের সময় যে পরিযায়ী পাখিরা এদেশে আসে, তাদের অধিকাংশের বসবাস উপকূলীয় অঞ্চলের নরম কাদাচর ও সিলেটের হাওর অঞ্চলের বিলে। পানিতেই থাকে এসব পরিযায়ী পাখির খাবার। খাওয়া শেষ হলে চর বা বিলের আশপাশের ঘাসের মাঠ, বালুর মাঠ, বনভূমি বা বন-বাদারের নিরাপদ স্থানে এসব পাখিরা থাকে। পরিযায়ী পাখিরা তাদের খাবার আর খুঁজে না পেলে, থাকার জায়গাও হারায়, তাই তারা বাধ্য হয়ে খাবারের খোঁজে, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলে যায় অন্য দেশে। আর এভাবেই কাটে পরিযায়ী পাখিদের জীবন।
শীত শেষ হলে প্রায় আশি শতাংশ পরিযায়ী পাখি এদেশ থেকে চলে যায় হিমালয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের দেশে। আর প্রায় বিশ শতাংশ যায় সুদূর সাইবেরিয়াসহ মধ্য ও উত্তর এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।