ঝিরিতে ইফতারের ঠান্ডা পানি আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার কিশোরী

রাঙামাটির দূর্গম পাহাড়ি জনপদ লংগদুতে ১৩ বছর বয়সী এক নাবালিকা কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক ৩ সন্তানের জনক মো. জহিরুল ইসলাম (২৫) পলাতক রয়েছে। গত (১৩ মার্চ) বুধবার রোজা রেখে সারাদিন তামাক ক্ষেতে কাজ শেষে ইফতারে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থার জন্য পাহাড়ি ঝিরি গেলে সেখানে ওই ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রাঙ্গীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে।

ভুক্তভোগীর পারিবার সূত্রে জানা যায়, ঝিরি থেকে পানি নেওয়ার সময় জহিরুল পিছন থেকে মাথায় আঘাত করলে কিশোরী মাটিতে পড়ে যায়। পরে গামছা দিয়ে কিশোরীর মুখ ও উড়না দিয়ে হাত বেঁধে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে অভিযুক্ত জহিরুল এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেন।

ভুক্তভোগীর বাবা ও মামা জানান, মেয়ে ভয়ে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে আমাদের কিছু না বললেও পরেরদিন (বৃহস্পতিবার) সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাকে সব জানায়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানালে তারা মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি ও থানায় অভিযোগ করতে বলেন।

তারা আরও জানান, মেয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় মামলা করতে গেলেও ওসি মামলা নেয়নি। বরং পরপর ৩ দিন থানায় ডেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে মেয়েকে নিয়ে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করি এবং সরকারি খরচে গতকাল (২১ মার্চ) আদালতে জহিরুলকে প্রধান আসামী ও অজ্ঞাত একজন দিয়ে মামলা করি।

অভিযুক্ত জহিরুল ইসলামের বাবা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, আমার ছেলে যদি সত্যিই এমন কিছু করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে ছেলেকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে এমন কাজ করেনি বলে জানায়। তার ঘরে বউসহ ৩ কন্যা সন্তান রয়েছে। সে পুলিশের ভয়ে পলাতক রয়েছে বলেও জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম জানান, ঘটনা জানানোর পর উভয়পক্ষের সম্মতিতে বৈঠকে বসে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে ধর্ষণের ঘটনা সত্য। তবে সামাজিকভাবে একটা মীমাংসার চেষ্টা করলেও সেটা সম্ভব হয়নি।

সরজমিনে প্রাথমিক তদন্তে যাওয়া লংগদু থানার এসআই মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ওসি স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগীর বাবার দেখানো এবং ধর্ষণের স্থান বলা একটি নির্জন তামাক ক্ষেত ও আশেপাশেও কোনো আলামত ছিল না। এ বিষয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না বলেও জানান তিনি।

মামলা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ জানান, ধর্ষণের বিরুদ্ধে থানায় কোনো এজাহার দায়ের বা অভিযোগ করেনি তাই মামলা নেয়া সম্ভব হয়নি। তবুও প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য থানার এসআই জয়নালকে তদন্তে পাঠানো হয়েছিল। পরে তদন্তসহ বিভিন্ন দিক থেকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় তাদের জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। পরবর্তীতে তারা আর থানায় যোগাযোগ করেনি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাথমিক চিকিৎসায়ও ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।