ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাকের ডিজে পার্টিতে হৈ-হুল্লোড়

ঈদ আনন্দে অপসংস্কৃতির দৌরাত্ম্য

খোলা ট্রাকে গাদাগাদি করে নতুন কাপড়ে সেজে, গান-বাজনা করে, উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে চারপাশে আতঙ্কের সৃষ্টি করে বিনোদন করছে উঠতি বয়েসের কিছু যুবক। এতে একদিকে যেমন বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকছে অন্যদিকে ঈদে সুস্থ্য বিনোদনে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

গ্রাম বাংলার পুরোনো ঐতিহ্যে ও ধর্মী ভাব ধারায় পালন করা হয় এ উৎসব। ঈদে মানুষ সময় কাটায় পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে। এছাড়াও বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করার জন্য ঘুরতে যায় বিভিন্ন দর্শণীয় স্থানে। যা আবহমান কাল ধরে বাঙালি মুসলিম সমাজ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু গ্রাম বাংলা অবিচ্ছেদ্য আনন্দ রেখে সম্প্রতি সময়ে ঈদে আনন্দের নামে চলছে অপসংস্কৃতির দৌরাত্ম্য।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের দিকে ঝুঁকছে তরুণ প্রজন্ম। তারা সংস্কৃতির বাহিরে বিনোদনের নামে খোলা ট্রাকের উপর ডিজে পার্টিতে হৈ-হুল্লোড় করে গান-বাজনা করছে। ঈদুল ফিতরের দিন মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু করে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অসংখ্য ট্রাক আর পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে কিশোরদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। যা শনিবারও বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে।

উচ্চস্বরে গান-বাজনা বাজানোর তালে উদ্দাম নৃত্য, লাফঝাঁপ আর চিৎকার-চেঁচামেচি চলতে থাকে চলন্ত গাড়িতে। কিশোর ও সদ্য কৈশোর পেরোনো এ তরুণদের এমন ঈদ বিনোদনকে ‘অসুস্থ বিনোদন’ বলে উল্লেখ করছে সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে ঈদের দিন থেকে শুরু করে দুই/তিন দিন পর্যন্ত কর্ণফুলীর মইজ্জেরটেক, ক্রসিং, শিকলবাহা কলেজ বাজার, ফকিনীরহাট, ফাজিলখার হাট, বড়উঠান মিয়ার হাটসহ আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ সরকার হাট, জয়কালীবাজার, আনোয়ারা সদর, কাফকো সেন্টার পর্যন্ত সড়কে পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার জন্য ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে এক শ্রেণির কিশোর, তরুণেরা উল্লাস করে বেড়ায়। ট্রাকে জেনারেটর নিয়ে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে নাচানাচি করে। চলন্ত গাড়িতে লাফালাফি করে তারা, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

শিকলবাহা কলেজ বাজারের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন নামাজের পর থেকে রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান-বাজনা বাজিয়ে ট্রাক নিয়ে সড়কে দাপিয়ে বেড়ায় কিশোররা। রাস্তাঘাটে মেয়েদের দেখলে বাজে মন্তব্য ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। অসভ্যতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

কিশোরদের ঈদ বিনোদনের নামে এভাবে ট্রাক নিয়ে গানবাজনা বাজিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো দিন দিন বাড়ছে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তাছাড়া ট্রাকে নাচানাচির সঙ্গে কিশোরীসহ নারীদেরও দেখা গেছে। এভাবে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করা জরুরী।

বড়উঠানের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম জানান, ঐতিহ্যের দিক থেকে ঈদের আনন্দ হবে সামাজিক আর মার্জিত। অথচ কিছু তরুণ ঈদের আনন্দেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। যেটা সম্পূর্ণ অপসংস্কৃতির উৎসব। এগুলো বন্ধে সামাজিকভাবেও এগিয়ে আসা উচিত। আর সড়কে অবাধে ঘুরে বেড়ানো বন্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য। যে কোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

চাতরীর চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল জানান, গান-বাজনা, ট্রাকে করে ঝুঁকি নিয়ে ঈদ উৎসব বা বিনোদন করা আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। এটা সম্পূর্ণ অপসংস্কৃতি। এতে দুঘটনার ঝুঁকি থাকে। এ অপসংস্কৃতি থেকে এ প্রজন্মকে দূরে রাখতে হবে। এতে ঈদ উৎসব পরিবেশ, সমাজ বা সংস্কৃতি পরিপূর্ণ থাকবে।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ জানান, সড়কে ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানে লোকজন বহন করাই নিষিদ্ধ। ঈদের সময় অনেককে বিনোদনের নামে ট্রাক-পিকআপ ভ্যান নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে সড়কে। যেখানেই তাদের পেয়েছে, সেখান থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশের টহল টিম। সড়কে পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।