‘টিচার থেকে চিটার’ ইয়াসমিনা, রূপের যাদু—কথার মায়ায় মানুষকে বসিয়েছেন পথে

ভুক্তভোগীদের বরাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম খবরকে বলেন—‘ইয়াসমিনা হকের কথায় একটা সম্মোহনী ক্ষমতা আছে। যাদেরকে তিনি টার্গেট করেছেন তাদের টাকা পয়সা হাতিয়ে পথে বসিয়েছেন। অনেকেই তার রূপের যাদুতেও আটকা পড়ছেন।’
ঠিক এভাবেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় পেশা ‘টিচার থেকে চিটার’ হওয়া ইয়াসমিনা হকের বিষয়ে বলছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

নয়টি চেক প্রতারণা মামলার পলাতক আসামি ইয়াসমিনা হককে রাজধানী ঢাকার শাহজাহানপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। তাকে সোমবার আদালতে সোপর্দ করলে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রতারক ইয়াসমিনা হক নগরীর একটি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্কুলের ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনায় দেশের একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। সেই বাহিনীতে নিজের আত্মীয়-স্বজন আছে বলে মিথ্যা প্রচার করতেন। তাছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে বলে ইয়াসমিনা হক প্রতারণার জাল ফেলতেন। সেই জালে আটকা পড়েছেন অনেক অভিভাবক, যারা চান তার সন্তান একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক।

এরকম প্রায় দেড় ডজন অভিযোগ জমেছিল স্কুল পরিচালনা পর্ষদের কাছে। বছর খানেক আগে গঠিত তদন্ত কমিটি সেসব অভিযোগের সত্যতা পেলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

ইয়াসমিনা হকের গ্রেপ্তারের খবরে তার সাবেক সহকর্মীরা আফসোস করে বলেন, কত সুন্দর একটা চাকরি, নিশ্চিত জীবন। রাতারাতি বড় লোক হওয়ার লোভ তাকে শেষ করেছে।

চাকরি হারিয়েও দমেননি প্রতারক সুন্দরী ইয়াসমিনা হক। বেকারদের টার্গেট করে নেমে পড়েন মাঠে। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বিভিন্নজন থেকে টাকা হাতিয়ে দিতেন চেক। আজ-কাল এভাবে চাকরি না পেয়ে প্রতারিত ব্যক্তিরা আদালতের দারস্থ হন। আদালত ৯টি চেক প্রতারণা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফেরদৌস জাহান বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন অংকের অর্থ গ্রহণ করেন ইয়াসমিন। তারা প্রতারিত হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ৯টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে তাকে আমরা ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যাদের থেকে টাকা নিয়ে ইয়াসমিনা হক চেক দিয়েছেন তারা আদালতের ধারস্থ হতে পেরেছেন। স্কুল ভর্তির কথা বলে যাদের সাথে প্রতারণা করেছেন তারা তাদের টাকা ফেরত চাওয়ার সুযোগ পাননি, তার চাকুরিচ্যুতিটাই শান্তনা। যারা রূপে মজেছেন তারাও চক্ষু লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। তাদের দাবী ইয়াসমিনা হকের স্বামীও তার প্রতারণার অংশীদার।

ইয়াসমিনা হক চাকরির সুবাদে বায়েজিদ থানার লিংক রোডে বসবাস করলেও তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাইরে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।