ডা. রবিউলের কিডনি প্রতিস্থাপন—দাতার দাবী প্রতারণা, গ্রহীতা বলছেন স্বেচ্ছায়

চট্টগ্রামের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডা. রবিউল আলমসহ তার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কৌশলে কিডনি নিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন আবু বক্কর (৪৪) নামের এক ব্যক্তি। মামলায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউলের স্ত্রী খালেদা বেগম ও চিকিৎসক ছেলে রাজীব হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে ডা. রাজিবের দাবী চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিযোগকারী আবু বক্করের কাছ থেকে তারা কিডনি ক্রয় করেছিলেন। আবু বক্কর এর আগেও একই ইস্যুতে দুইবার মামলার করেছিলেন। তদন্তে তার অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তার মামলা খারিজ করে দেন বলেও জানান ডা. রাজিব।

রোববার (১৪ জুলাই) চট্টগ্রাম পঞ্চম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবু বক্কর মামলাটি করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়া অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদি আবু বক্কর চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার ওয়াজেদিয়া এলাকার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা ডা. রবিউল চট্টগ্রামের বর্তমানে খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় থাকেন। ডা. রবিউলের চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ‘আবু বক্কর বাড়িতে পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিচয়ের সুবাদে একদিন ডা. রাজীব হোসেন তাঁর বাবা ডা. রবিউলের সঙ্গে আবু বক্করের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় সিঙ্গাপুরে ডা. রবিউলের চিকিৎসা করানোর কথা বলে তাঁদের একজন অ্যাটেন্টডেন্ট প্রয়োজনের কথা জানানো হয় আবু বক্করকে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তখন আবু বক্কর তাঁদের সঙ্গে অ্যাটেন্টডেন্ট হিসেবে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হন।
২০১২ সালে ১০ মার্চ ডা. রবিউল হোসেন, তাঁর স্ত্রী খালেদা বেগম, ডা. রাজীব হোসেনসহ তিনি সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে পৌঁছে ডা. রবিউলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ডা. রাজীব হোসেন মামলার বাদীকে জানান যে, তাঁর বাবার অবস্থা ভালো না। তাঁকে সুস্থ করতে হলে যেকোনো মানুষ থেকে কিছু টিস্যু দিতে হবে। এ সময় টিস্যু দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বলে আশ্বস্ত করে বাদীকে টিস্যু দেওয়ার অনুরোধ করেন ডা. রাজীব। বাদী মানবিক বিবেচনায় টিস্যু দিতে রাজি হন। পরে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর ডা. রবিউলের সঙ্গে বাদীর টিস্যুর মিল আছে জানিয়ে বাদীকে অপারেশনে রাজি করানো হয়।
ওই বছর ৩ এপ্রিল বাদীকে হাসপাতালে ভর্তির পর অপারেশন করা হয়। ৯ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়। একই বছরের ১৫ এপ্রিল বাদীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

মামলায় আবু বক্কর আরও উল্লেখ করেন, ‘বাদী টিস্যু দিয়ে জীবন বাঁচানোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁকে আসামিদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং আই ইনফর্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্সে চাকরি দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে শারীরিক দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখিয়ে বাদীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর দিনে দিনে বাদীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গত ২৩ মে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি আলট্রাসনোগ্রাফি করান। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তাঁকে চিকিৎসক জানান, তাঁর ডান কিডনি নেই। চিকিৎসক মতামত দেন, সার্জারির মাধ্যমে তাঁর ডান কিডনি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
কিডনি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি জানার পর আবু বক্কর বিবাদীদের কাছে গেলে তাঁকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাউকে বিষয়টি না জানাতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গত ১৩ জুন বাদী তাঁদের বাসায় গেলে উল্টো তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। আসামিরা প্রভাবশালী। এই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।’

আবু বক্কর চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার ৫ মাস পর চট্টগ্রাম আই ইনফরমারিতে তাকে একটি চাকরি দেন ডা. রবিউল। শারীরিক অক্ষমতার অভিযোগ তুলে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।

ডা. রবিউলের ছেলে ডা. রাজিব হোসেন বলেন, আমরা চট্টগ্রামের স্বনামধন্য স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। ১২ জন ডোনার যোগাযোগ করলে আবু বক্করের সাথে ম্যাচ হয়। তখন তার সম্মতিসহ যাবতীয় নিয়ম রক্ষা করে আমার আব্বুর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। চুক্তি অনুযায়ী বক্করকে ৫ লাখ টাকার পরিশোধ করা হয়েছিল। তার বোনের বিয়েতে আমার আব্বু খুশি হয়ে আরও দুইলাখ টাকা সহযোগিতা করেছেন।
এরপর তাকে হাসপাতালে গরীব রোগীদের সহযোগিতা করার দায়িত্ব দিয়ে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। রোগীদের থেকে অবৈধভাবে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। তখন হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট তাকে চাকুরিচ্যুত করে।

এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম এবং সেই মামলা খারিজ হওয়ার পর আরও একবার একই ইস্যুতে মামলা করার বিষয়টি স্বীকার করে আবু বক্কর বলেন, আগে আদালতে সব ডকুমন্ট দিতে পারিনি বলে হেরেছি। এবার সব ডকুমেন্ট আদালতে দিয়েছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।