তিন মেধাবী ছাত্রের এমন পরিণতির দায় কার?

মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার ৪টি ঝর্ণা এবং একটি লেক নিয়ে সরকারের বনবিভাগ গঠন করে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান। এখানে বারবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

সর্বশেষ গত রবিবার (১৯ জুন) ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম’র (ইউএসটিসি) স্নাতকের ছাত্র মাসুদ আহম্মেদ তানভীর, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র তৌফিক আহম্মেদ তারেক ও চট্টগ্রাম ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্ত ঝর্ণার চূড়ায় ওঠার পর দুর্ঘটনা ঘটে।

এরপর ফায়ার সার্ভিস ও মিরসরাই থানা পুলিশ প্রথম দিন প্রান্ত এবং প্রায় ১২ ঘন্টা পর গতকাল সোমবার পাশের একটি ছড়া থেকে তানভীরের মরদেহ উদ্ধার করতে পারলেও আজ মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত কলেজিয়েটের ছাত্র তারেকের সন্ধান মেলেনি।

তাকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে কাজ করছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ডুবুরি দল।

এদিকে ভরা বর্ষায় পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটকেরা কীভাবে উঠছে বা পর্যটকদের উপরে ওঠার ব্যাপারে কী নিরাপত্তার বিধান রেখেছে কর্তৃপক্ষ, এমন প্রশ্ন তুলছে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন।

নিহত পর্যটক ইশতিয়াকুর রহমান প্রান্তর বাবা জনতা ব্যাংক চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ জাকারিয়া নিজের ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায়। তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, এমন ভরা বর্ষায় পর্যটকদের পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে দিচ্ছে। অথচ তাদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

নিহত তানভীর ও নিখোঁজ তারেকের মামা চট্টগ্রাম নগরীর সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান সুমন বলেন, এমন মেধাবী তিন তিনটা ছেলে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে আজ এমন পরিণতির শিকার হলো। অথচ কেউ এর দায় নিতে রাজি নয়।

এসব মেধাবী ছাত্রের স্বজনদের এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে কথা বলা হয় নাপিত্তার ছড়া ঝর্ণার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিএসআর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এ তিন ছাত্র টিকিট কেটে ঝর্ণায় প্রবেশ করেছে। সরকারিভাবে নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে আমরা ঝর্ণার প্রবেশ মুখে ঝর্ণার চূড়ায় না উঠতে নির্দেশনামূলক কিছু প্লেকার্ড লাগিয়েছি।

পর্যটকদের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোন গাইড রাখা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এ ঠিকাদার।
জানা গেছে, চলতি বছর ২৯ এপ্রিল মিরসরাইয়ের নাপিত্তার ছড়া ঝর্ণা, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, রূপসি ঝর্ণা ও বাওয়াছড়া লেক এবং সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা ঝর্ণা লিজ দেয় চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ।

২৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা মূল্যে এটি লিজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিএসআর ইন্টারন্যাশনাল। তারা গত দুই মাস ঝর্ণা ও লেক অভিমুখে টিকিট কাউন্টার তৈরি করে পর্যটকদের থেকে মূল্য নিলেও নিরাপত্তা এবং গাইডের কোন ব্যবস্থা রাখেনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইজারা পেয়েছে তারা অবশ্যই পর্যটকদের জন্য গাইড রাখতে হবে। তাদের কার্যাদেশে আরো কী কী শর্ত আছে তা দেখে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এসব ঝর্ণা এবং লেকের ইজারা বাতিলের জন্য বনবিভাগকে চিঠি দেয়া হবে। পাশাপাশি এসব এলাকা পর্যটন উপযোগী করা পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করার ব্যাপারটিও চিঠিতে উল্লেখ থাকবে। এছাড়া আমরা আরেকটি চিঠি দিচ্ছি পর্যটন কর্পোরেশনকে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।