তেল নিয়ে তেলেসমাতি— অন্যরা নীরব, থেমে গেলো ভোক্তা অধিকারও

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোজ্যতেল আমদানী করা হচ্ছে উচ্চমূল্যে। তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশেও হঠাৎ করেই গত ৫ বাড়ানো হলো তেলের দাম।

এরপর থেকেই বাজারে নেই সয়াবিন তেল। যাদের কেনা ছিলো তারাও সরিয়ে নিয়েছে দোকান থেকে। আর যারা বিক্রি করেছেন তারা কম দামে কেনা থাকলেও নতুন দামে বিক্রি করেছেন সয়াবিন তেল।

দাম বাড়ানো নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেছেন- ব্যবসায়ীদের ওপর বিশ্বাস রেখে ভুল করেছি। ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বাজারে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। ৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন নতুল মূল্য নির্ধারণ করে।

বৈঠকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হবে ১৯৮ টাকা আর ৫ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকা পরিবর্তে ৯৮৫ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা এবং খোলা পাম তেল প্রতি লিটার ১৭২ টাকায় বিক্রি হবে। বর্তমানে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা ও পাম তেল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, গত শুক্রবার খাগড়াছড়িতে ৫৭ হাজার লিটার অবৈধ মজুতের তেল জব্দ করা হয়। পরদিন ফটিকছড়িতে আড়াই হাজার লিটার জব্দ করা হয়।

রোববার নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেইট কর্নফুলী মার্কেটে ব্যবসায়ীর গোপন কুঠুরি থেকে জব্দ করা হয় এক হাজার ৫০ লিটার তেল। সর্বশেষ পাহাড়তলী বাজারে এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে জব্দ করা হয় ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল।

চৌমুহনী সিডিএ কর্ণফুলী মার্কেটের ব্যবসায়ী রবিউল আলম বলেন, আমরা যতটুকু জানি কোম্পানীগুলো ডিলারদের তেল দিচ্ছে। ডিলাররা আমাদের তেল সরবরাহ করছে না। খুচরা যা ছিল আমরা গায়ের দামেই বিক্রি করেছি, তেল তো শনিবারেই শেষ।

বহদ্দারহাট বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল আলম বলেন, ডিলাররা আমাদের তেল দিচ্ছে না। যা ছিল শুক্রবারে শেষ হয়েছে। শুক্রবার থেকে আমাদের কাছে সয়াবিন তেল নেই।

অতীতে জাতীয় বিভিন্ন সংকটে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম নগর পুলিশ, র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।

কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম। ৫ মে থেকে বাজারে তেল নেই। ৬ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর যেখানেই অভিযান চালিয়েছে পেয়েছে তেলে অবৈধ মজুত। কিন্তু রহস্যজনকভাবে অন্যরা নীরব।

এরই মধ্যে লোকবল সংকটের কথা বলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরও অভিযান বন্ধ করেছে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের লোকবল সংকটের বিষয়টি সত্য। কিন্তু অন্যদের নীরবতায় প্রশ্ন উঠেছে- ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকেও কী থামিয়ে দেওয়া হয়েছে?

এই প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, কিছু দাপ্তরিক কাজ জমে যাওয়ায় আজ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

র‌্যাবের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন করলে র‌্যাব-৭এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, র‌্যাব নীরব থাকার সুযোগ নেই। আমরাও কাজে নেমেছি। শিগগিরই রেজাল্ট দেখবেন।

অপর দিকে, সরকার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ—টিসিবির মাধ্যমে সয়াবিন তেল আমদানীর পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। টিসিবির কার্ডধারীদের সরকার প্রতি লিটার ১১০ টাকায় সরবরাহ করছে বলেও জানা গেছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫ মে যে মূল্য নির্ধারণ করেছে সেখানে ব্যর্থতা আছে। কারণ বাজারে যে তেল আছে তা ১২শ থেকে ১৬শ ডলারের এলসি। ১৮শ ডলারের এলসিতে ক্রয় করা তেল এখনো বাজারে আসেনি। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুল সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যেখানে অভিযান চালিয়েছে সেখানে তেলের মজুত পাচ্ছে। ভোক্তা অধিকারের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, র‍্যাব, পুলিশের জোরালো অভিযান প্রয়োজন। এখন ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান হলে আর বেশি মজুত করা তেল পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।