দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে—প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তেব্যের শুরুতেই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে (নদীর তল দিয়ে গাড়ি যাবে)। এটি আপনাদের জন্য উপহার।’ এই কথা বলেই মুখে হাসি শেখ হাসিনার। কিন্তু বক্তব্যের শেষে প্রায় ১৫ সেকেন্ড নীরব থেকে বক্তব্য শেষে অংশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক বোন ছাড়া আপনজন বলতে আমার কেউ বেঁচে নেই। সবাইকে তারা মেরে ফেলেছে। আপনারই আমার আপনজন। আমার জন্য দোয়া করবেন।’
শনিবার (২৮ অক্টোবর দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কেইপিজেড মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দেশের, তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর নিচে দিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ২০ মিনিট বক্তব্য দেন। বক্তব্যে নিজের দুঃখকষ্ট ও পরিবার হারানোর বেদনা তুলে ধরেন। বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে নিজের জন্যও ভোট চান।

জনগণের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরকে ওই সমস্ত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। এ কারণে তাদেরকে একবার ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। আজকে আমার কাছে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আবার আমাকে জেতাবেন কি না?’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, বাংলার মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন। তাঁর সেই আদর্শ নিয়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি।’

এরপর প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাই-বোনেরা আমার। আমি তো সবই হারিয়েছি। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একই সাথে আমার মা, তিন ভাই…১০ বছরের ছোট ভাইকেও হত্যা করে। আমি আর ছোট বোন বিদেশে ছিলাম, তাই বেঁচে গিয়েছিলাম। ৬ বছর জিয়াউর রহমান আসতে দেয়নি। জোর করেই দেশে ফিরে আসি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আপনাদের জন্য আমি একটি ছোট্ট উপহার নিয়ে এসেছি। এটি হলো টানেল। এখন দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে। দক্ষিণ এশিয়ায় এত বড় আর টানেল নেই। আগামীকাল টানেল জনসাধারণ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রামের ভেতরে ঢুকে যানজটে পড়তে হবে না। টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। যা আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।’

খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কারণে তাদেরকে একবার ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। আমরা বাবা-মা সব হারিয়েছি। দুই বোন বাইরে থাকায় বেঁচে গেছি। বাংলাদেশের যখন এসেছি তখন খুনিদের দল ক্ষমতায় ছিল। এখানে আসার পর অনেক বাধা পেয়েছি। আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার একটাই কাজ, দেশের মানুষের কল্যাণ করা। আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।’

এর আগে বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।