দখলদারদের থাবায় বিলুপ্তির পথে শত বছরের কর্ণফুলীর হাট

অবৈধ দখলদারদের থাবায় ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে শত বছরের ঐতিহাসিক চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর ফাজিলখাঁর হাট। হাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- করোনাকালে এ হাটকে উপজেলা প্রশাসন সামাজিক দূরত্বের জন্য সরিয়ে নেয় পিএবি সড়কের পাশে। সেখানে অস্থায়ী যত্রতত্রভাবে বাজার গড়ে ওঠায় ঐতিহাসিক এই হাট এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। উপজেলার বড় হাটের মধ্যে অন্যতম ফাজিলখাঁর হাটটি।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নেই পুরনো সেই রূপ। ক্রমেই ছোট হয়ে গেছে হাটে বসার জায়গা। বিভিন্ন ছোট বড় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ। মাটির তৈরি দোকানগুলোর টিনের চালে জং ধরে ভেঙে পড়ছে। নেই কোনো বিক্রেতার বসার স্থান ও ক্রেতাদের হাটার ব্যবস্থাও।

কাদা পানিতে সয়লাব পুরো হাটের জায়গা। হাটে শুকাতে দেওয়া হয়েছে কাপড়। হাটের এক অংশে গড়ে উঠেছে দৌলতপুর একতা ক্লাবও। তবে এ ক্লাব ভাড়া দেওয়া হয়েছে সিএনজি চালকদের। নেই কোনো ক্লাবের সাংগঠনিক কার্যক্রমও।

স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এই হাটকে পিএবি সড়কের পাশে খোলা মাঠে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এতদিন পরেও হাটটি আগের হালে ফিরে আসেনি।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, করোনাকালের আগে হাটের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারণে হাটে যানবাহন প্রবেশ করতে না পারায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কমেছে। ক্রমাগত ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

ঐতিহাসিক এ হাটটি এখন ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে তার অস্তিত্ব হারানোর পথে। পুরো হাট দখলে নিয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না। হাটের জমি দখল করে গড়েছে ক্লাব। কিন্তু সে ক্লাবের কখনও একটা মিটিং বা সভা হতেও দেখেনি কেউ। ক্লাবটি ভাড়া দিয়ে রেখেছে সিএনজি চালকদের। চালকরা সেখানে রাতে রাখে তাদের গাড়ি। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা নিজেদের মতো করে দখল করে নিয়েছে হাটের জায়গা। আর এতেই হাটে যানবাহন চলাচলের রাস্তা সরু হতে হতে এখন গলি হয়ে গেছে। আর এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

দখলদারদের থাবায় বিলুপ্তির পথে শত বছরের কর্ণফুলীর হাট 1

স্থানীয় বাসিন্দা অধীর দাশ জানান, আমাদের বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখছি এ হাটে বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষকে আসতে। প্রতিবছর অনেকজনই ইজারা নেন এ হাটের। কিন্তু সরকার বা ইজারাদাদের কোনোদিন দেখিনাই কোনো উন্নয়ন বা সংস্কার করতে।

ফাজিলখাঁর হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আলমগীর জানান, করোনাকালে হাটটি সড়কের পাশে বসার পর থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। বর্তমানে হাটের ইজারার টাকাও তুলতে পারছি না। অন্যদিকে পুরাতন হাটের জায়গাও দখলে। শুধুমাত্র কসাইদোর মাংস বিক্রির স্থান ছাড়া সবগুলো প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে গড়েছেন স্থাপনা। এছাড়াও এখন আর হাটের আগের মতো রূপ নেই। ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও অনেক কমে গেছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতপুর একতা ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান খান বলেন, হাটের আশপাশের জমিসহ অনেক জমিও সরকারি খাস। করোনার পরও ব্যবসায়ী বা ইজারাদার কেউ এখানে বসেননা। ক্লাবটিও সরকারি খাস জমিতে। আমার অফিসটাও আমি ভাড়া নিয়েছি, জমিদারকে দিতে হয় প্রতিমাসে ভাড়া। তবে ক্লাবটিতে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম চলে না। ক্লাবটি সিএনজি চালকদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভারপ্রাপ্ত পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, হাটের জায়গা দখল করার কোনো সুযোগ নেই। শিগগিরই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালাবে প্রশাসন এবং সরকারি খাস জমি দখলে আছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।