দগ্ধ শরীরে শিশুর জন্ম, তিনদিন পর মারা গেলেন মা

অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন রান্না করতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় গৃহবধূ জুলি আকতার (২০)। সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারার জুঁইদন্ডীর গৃহবধূ অগ্নিদগ্ধ জুলি আকতার বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার অগ্নিদগ্ধ শরীরে তাঁর কোলে আসে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। একদিনপর জ্ঞান ফিরে দেখে সন্তানের মুখ। বুধবার বিকেল থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় আইসিইউতে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যায় সে। তিনি আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী গ্রামের মুফিজুর রহমানের স্ত্রী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০২১ সালে প্রতিবেশী মুফিজুর রহমানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরমধ্যেই ৯ মাসের অন্তঃসত্তা জুলি আকতার দগ্ধ শরীরে জন্ম দেন একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। আগুনে তার শরীরের ৬৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায়।

গত শুক্রবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে খাবার রান্না করতে গিয়ে চুলার আগুনে দগ্ধ হন জুলি আকতার। স্থানীয়দের সহযোগিতার উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করান এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে জুলি আকতারের গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা তিনদিনের কন্যা সন্তানকে নিয়ে আহাজারি করছে। সবার নজর নিহত জুলি আকতারের ৩দিনের কন্যা শিশুটির দিকে। এসময় শিশুটির ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তা করছেন অনেকেই।

প্রতিবেশিরা জানান, শিশুটি জন্মের পরই তার মায়ের বুকের দুধ পর্যন্ত পান করতে পারেনি। কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে উঠে, কোলে নিয়ে হাটাহাটি করলে থেমে যায় কান্না। চোখ মেলে সবার দিকে থাকাই, আবার চোখ বন্ধ করে, শিশুটির এ পরিস্থিতি যখন চলছে, তখন তার মাকে খাটে করে নিয়ে যাচ্ছে কবরস্থানে। তিনদিন আগে জন্ম নেয়া শিশুটির পরিস্থিতি দেখে অশ্রুজল ধরে রাখতে পারেনি আগত অতিথিরা।

জুলি আকতারের বড় ভাই মুহাম্মদ ফরহাদ বলেন, বোনকে বাঁচানোর জন্য সবধরণের চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। গত এক সপ্তাহে ২০ ব্যাগ রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে আমার সহপাঠিরা।

ঘটনার ৫দির পর মঙ্গলবার কন্যা শিশুটির জন্ম হয়। বুধবার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোনের মৃত্যু ঘটে।

তার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। এলাকায় চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ীতে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।