দুদকের সাবেক কর্মকর্তা ডা. শরীফ ফিরলেন ‘নিজ পথে’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন পাস করা ডা. শরীফ উদ্দিন। একাডেমিক পড়া লেখা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে ২০১৪ সালে দুদকে যোগদান করেন। কিন্তু রাঘব বোয়ালদের রোষানলে পড়ে দুদক চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা বলে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন কোথাও চাকরি না পেয়ে ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন, এমন খবরে তাকে চাকরি দিতে এগিয়ে আসেন অনেকেই। ডা. শরীফের নতুন কর্মস্থল তার একাডেমিক পড়াশোনা ওরিয়েন্টেড, তিনি ফিরলেন নিজ পথে।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিন নিজেই চট্টগ্রাম খবরকে জানান, ‘একটি ভেটেরিনারি মেডিসিন কোম্পানির হেড-অফ টেকনিক্যাল সার্ভিস কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করা চূড়ান্ত হয়ে। বেতন ৮০ হাজার টাকার মতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সমর্থনকারীদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের কল্যাণে মহান আল্লাহ আমাকে দেশ ও বিদেশের অনেক সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান তাদের সহকর্মী হিসেবে পেতে চাইছে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের।’

প্রায় তিন ডজন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েও ভেটেরিনারি মেডিসিন কোম্পানিতে কেন যোগ দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শরীফ বলেন, আমি পড়াশোনা করেছি ভেটেরিনারি। দুদকে যোগ দিয়েছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূর্নীতি বিরোধী যুদ্ধে সামিল হতে। আমি আবারও দুদকে ফিরে কাজ করতে চাই। তবে আপাতত প্রাণীদের চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার সুযোগ পেয়ে সেটাই পছন্দ করেছি।

রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতি, কক্সবাজারের বড় বড় প্রকল্পের দুর্নীতিসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করে এনেছিলেন তিনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। পরে রাঘববোয়ালের রোষানলে পড়ে চাকরি হারানোর গল্পটা সবারই জানা।

কোথাও চাকরি না পেয়ে সেই শরীফ উদ্দিন এখন চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ভাইয়ের দোকান সামলাচ্ছেন। সেই দোকানে ক্যাশিয়ার হিসেবে আছেন তিনি। মুদি দোকান করে বর্তমানে সংসার চালাচ্ছেন দুদকের এক সময়ের দাপুটে কর্মকর্তা। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ হয় সম্প্রতি। যা সাড়া ফেলে পুরো দেশজুড়ে।

শরীফ তার মেয়াদকালে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য আলোচিত হন। তিনি প্রায় সাড়ে ৩ বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছিলেন। এ মামলার পরপর ২০২১ সালের ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪ এর ২ ধারায় কমিশনের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সে সময় বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

শরীফকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার এবং ২০০৮ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি বাতিলের দাবিতে তার সহকর্মীরা দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ কমিশনের অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধন করেন, যা নজিরবিহীন।

এরপর চাকরি ফেরত চেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেন শরীফ। দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা-২০০৮ এর ৪৮ বিধি অনুযায়ী অপসারণের আদেশ পুনঃনিরীক্ষা করে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার করার আর্জি জানানো হয় সেখানে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।