দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

পার্বত্য তিন জেলার চেয়ে রাঙামাটির আসনটি নিয়ে সবার চোখ থাকে বরাবরই। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জেএসএস ও বিএনপির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রাখতে চায়। অন্যদিকে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া জেএসএস এবং বিএনপি।

জানা গেছে, এরশাদ সরকারের পতনের পর পার্বত্য ২৯৯ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন দীপংকর তালুকদার, ১৯৯৬ সাল সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ পার্বত্য অঞ্চলের দ্বিতীয়বার নির্বাচনে থেকে আবারো দীপংকর তালুকদার জয়লাভ করে ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি বাস্তবায়ন ও পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় দীপংকর তালুকদারের। ২০০১ সালের নির্বাচনে চুক্তি নিয়ে বিরোধিতাকারী বিএনপির প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ানকে সমর্থন দিয়ে দীপংকর তালুকদারকে পরাজিত করে। ২০০৮ সালে আবারো নিবাচনে জয় লাভ করেন দীপংকর তালুকদার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আঞ্চলিক দলের তৎপরতায় ও বিএনপির সহযোগিতায় জয় লাভ করে জেএসএস প্রার্থী উষাতন তালুকদার। ২০১৮ সালে এসে আবারো আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার তার হারানো আসন ফিরে পান।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার এই আসনটি এককভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন বর্তমান এমপি দীপংকর তালুকদার। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে গতবারের চেয়ে আরও বেশি ভোটে জয়ী করে আসনটি ধরে রাখার কথা জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে পার্বত্য অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এজন্য এমপি দীপংকর তালুকদারের অবদান বেশি। তিনি পার্বত্য মানুষের অধিকার রক্ষায় এবং পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক দলগুলোর দমন পীড়ন, চাঁদাবাজি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। পাহাড়ের অশান্তির মূল উৎপাটনের জন্য প্রশাসনের কাছে বার বার তাগিদ দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে কোন সরকারের আমলে তা হয়নি। তাই আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবে সাধারণ মানুষ।

এদিকে একদফা দাবিতে আন্দোলন করলেও রাঙামাটি জেলা বিএনপি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক মনিষ দেওয়ান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক যুগ্ম জেলাজজ অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান এবং জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দিপু। তবে মাঠে থাকলেও এখনো দল গোছাতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের কারণে ব্যর্থতার মুখ দেখছে বার বার বিএনপি। ১৯৯১ সাল থেকে ছয়বারের নির্বাচনে মধ্যে ২০০১ সালে একবার আসন পায়।

অন্যদিকে আসন পুনরুদ্ধারে মাঠে সক্রিয় সন্তু লারমা সমর্থিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। যেভাবে হোক তারা আসনটি উদ্ধার করতে চায়। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সহসভাপতি ও সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার ও জেএসএস কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চাকমা এবং জেএসএস সমর্থিত ও সাবেক স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ানের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে জেএসএসর হাইকমান্ড এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলছে না।

এ বিষয়ে সাবেক এমপি উষাতন তালুকদার বলেন, দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে। আমি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে এই আসনটি আমরা চাইব।

এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিলে রাঙামাটি জেলা জাতীয় পার্টি মাঠে থাকবে মনোয়নের প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হারুনুর রশিদ মাতব্বর, সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ চাকমা, জাতীয় পার্টির সদস্য ডা. রূপম দেওয়ান ও একেএম পারভেজ তালুকদার।

সব মিলিয়ে আসনটিতে এবার লড়াই হবে ত্রিমুখী। যা আওয়ামী লীগ, জেএসএস ও বিএনপির মধ্যে আর নির্বাচন নিয়ে পার্বত্য এলাকার মানুষের মনে সংশয় থাকলেও ভোট দিতে আগ্রহী ভোটারা। পাহাড়ের উন্নয়নে যে দল কাজ করবে এমন দলকে নির্বাচিত করতে চায় সাধারণ ভোটাররা।

অবৈধ অস্ত্র যে বন্ধ করবে জনগণ তার পক্ষে যাবে

পাহাড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় বাধা হতে পারে অবৈধ অস্ত্র। ইতোমধ্যে আঞ্চলিক দলগুলো পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করতে জাতীয় সংসদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছেন পাহাড়ের নেতারা।

পাহাড়ের সাধারণ ভোটাররা বলছেন, পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের মুল বাধা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। সরকার যতই উন্নয়ন করুন না কেন, অবৈধ অস্ত্রের কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বাধা আসছে সব সময়। আঞ্চলিক দলগুলোর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যে সরকার কাজ করবে জনগণ তার পক্ষেই থাকবে। এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে শুধু দীপংকর তালুকদার বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও সেমিনারে বললেও অন্য কারো মুখে এই আওয়াজ শোনা যায়। সাধারণ ভোটাররা পাহাড়ের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ২৯৯ একটি আসন। এখানে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭৩ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ জন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।