রাঙামাটির লংগদুতে ধর্ষক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমকে চাকরিচ্যুত ও বিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণসহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জিয়াউর রহমানকে পদ থেকে অব্যাহতির দাবিতে মানববন্ধন করেছে উপজেলার করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র লিটু চাকমা, সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কল্যাণ মিত্র চাকমা, অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন এরিক চাকমা এবং অতিথির বক্তব্য রাখেন লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলি।
এ সময় বক্তারা বলেন, করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধর্ষক আব্দুর রহিম ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়েও জামিনে এসে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এতে করে এলাকাজুড়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সুশীল সমাজ।
তারা বলেন, চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও জামিন না মঞ্জুর করে পুণরায় তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
বক্তারা আরও বলেন, নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করার পর আবারও বিদ্যালয়ে যোগদান করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জিয়াউর রহমান তাকে সমর্থন দিচ্ছে। তাই শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে কলুষিত না করে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনের প্রতি ধর্ষক প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সভাপতিকে বিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবি জানান তারা। এছাড়াও তাদের অপসারণ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অত্র বিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করেছেন বলেও জানান।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়িতে এক স্কুলছাত্রী (১৬) ছাগল খুঁজতে বের হলে করল্যাছড়ি আর এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহিম তাকে লেবু দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে স্কুলের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে। সে সময়ে স্কুলের ছাত্রাবাসে কেউ ছিল না। বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দিতে থাকেন ওই শিক্ষক। পরবর্তীতে ঘটনার ৯ দিন পর ৫ অক্টোবর স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে লংগদু থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলায় ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর আব্দুর রহিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে রাঙামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ.ই.এম ইসমাইল হোসেন রায় দেন। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি আব্দুর রহিম। পাশাপাশি তিনি জামিন চেয়েও আবেদন করেন। এরপর গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ১ জুন বিচারপতি এস.এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে আদেশ যাতে পুনর্বিবেচনা করা যায় সেজন্য বিষয়টি ১৫ দিন পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়।
১৫ জুন মামলাটি পুনরায় কার্যতালিকায় আসে। এরপর অধস্তন আদালতের প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর গত ২১ জুন আসামি আব্দুর রহিম রাঙ্গামাটির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং ২৩জুন বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।