ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে স্থায়ী বহিস্কারের শর্তে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা

রাঙামাটির লংগদুতে করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় হওয়ায় তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ হতে স্থায়ী বহিস্কার চায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এই দাবীতে শিক্ষার্থীরা গত রোববার থেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধসহ ক্লাস বর্জন করে।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকালে বিদ্যালয়ে উপজেলা প্রশাসন অভিভাবকদের সাথে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কারের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে ফিরবে বলে অভিভাবকরা নিশ্চয়তা প্রদান করেন।

বৈঠকে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির করণীয় বিষয়ে বুধবার (৩০ আগস্ট) বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে।

বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নৈতিকভাবে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম শিক্ষকতা করার অধিকার হারিয়েছেন। আমরাও অভিভাবকদের দাবীর সাথে একমত। আমরাও চাই তার শাস্তি হোক। তবে এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন। আদালতের রায়ে যা হোক না কেন বিভাগীয়ভাবে তাকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু, লংগদু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলি, আটারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) লংগদু থানা কমিটির সভাপতি অনঙ্গ লাল চাকমা, আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য স্মরণিকা চাকমা, অভিভাবক এরিক চাকমা ও সাবেক শিক্ষার্থী কল্যাণ প্রিয় চাকমা প্রমূখ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কার এবং নিম্ন আদালতের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় উচ্চ আদালতেও বহাল রাখার দাবীতে লংগদু উপজেলা সদরে মানববন্ধন করে করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ আরো চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এরপর গত সোমবার (২৮ আগস্ট) রাঙামাটি জেলা সদরেও একই দাবীতে মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র সমাজ ও অভিভাবকরা।

প্রসঙ্গত, করল্যাছড়ি রশিদ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অত্র বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে লংগদু থানায় মামলা করলে আদালতে আত্মসমর্পন করে অভিযুক্ত আব্দুর রহিম। রাঙামাটি আদালত গত ২৯ নভেম্বর ২০২২ সালে আব্দুর রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন স্বশ্রম কারাদন্ড এবং দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে ধর্ষিতা ওই ছাত্রীকে এক একর জমি লিখে দেওয়ার শর্তে ২১ জুন ২০২৩ তারিখে তিন মাসের জন্য অন্তবর্তী জামিন পান আসামী আব্দুর রহিম এবং ২৩ জুন থেকে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমার কাছে দন্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কারের দাবী তোলেন।
সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বহিস্কার করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।