ধূলোর সমাধানে ‘স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’ উদ্ভাবন

চট্টগ্রাম নগরে সড়কে বের হলেই দেখা মেলে ধূলো ও ময়লার। ধূলো ও ময়লায় নগরবাসীর অস্থিরতার মাঝেই অনুষ্ঠিত হলো দু’দিন ব্যাপী জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। এ মেলায় নজর কাড়ে আনোয়ারা সরকারী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মুহাম্মদ বুরহান উদ্দিন ও মোহাম্মদ মহিনুল ইসলাম রিজভী উদ্ভাবন করা ‘স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’।

৪৩ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় কলেজ পর্যায়ে এই উদ্ভাবনের জন্য পেয়েছেন সেরা পুরষ্কার।

মেলার সমাপনী দিন সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দেখা হয় বুরহান উদ্দিন ও মহিনুল ইসলামের। তারা ছিলেন ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ নং ভবনে। চোখে পড়ল দু’জন ছাত্র কাগজের কিছু টুকরো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছে। তাদের এমন ভিন্ন ধরনের কাজ কৌতুহল মনে হলে আলাপ হয় দুজনের সাথে। এ দুই শিক্ষার্থী জানালেন তাদের উদ্ভাবিত এ যন্ত্রের নাম ‘স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’।

স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি রিমোট কন্ট্রোল চালিত একটি যন্ত্র। এই যন্ত্র দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধূলো ও ময়লা পরিষ্কার করা যায়। এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই যন্ত্রের পাওয়ার সাপ্লাই সুইচ আছে, এই সুইচটি চালু করলেই ভ্যাকুয়াম টিউবের মাধ্যমে ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডারের ভেতর বাইরের ময়লা টেনে নেয়। রিমোর্ট দিয়ে সহজেই একগাদা ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায়। কোনো প্রকার ময়লা স্পর্শ না করেই এই প্রক্রিয়ায় পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করা যায় বলে জানান এই ক্ষুদে বিজ্ঞানিরা। ময়লা নিস্কাশনের পর আবার রিমোর্টের মাধ্যমে অন করে ‘স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’ ভ্যাকুয়াম ব্লেডের দ্বারা ভ্যাকুয়াম সিলিন্ডার ও ভ্যাকুয়াম টিউব নিজ থেকেই পরিষ্কার করে নেয়।

মুহাম্মদ বুরহান উদ্দিন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, মেলায় আসার ১ সপ্তাহ আগে কলেজ থেকে বলা হলো ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪৩ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা আছে। আমাকে টিম লিডারের দায়িত্ব দেওয়া হলো। তখন আমার মাথায় চিন্তা আসলো করোনা মহামারী চলছে। মানুষ ঘরে থাকলেও ময়লা- আবর্জনাও বেড়ে চলেছে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে । এ ছাড়া ধূলো-বালি-ময়লা থেকে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন রোগবালাই।

এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী আরো বলেন, আমি চিন্তা করলাম ময়লা-আবর্জনাকে কীভাবে মানুষের স্পর্শ ছাড়া পরিষ্কার করা যায়। তাৎক্ষণিক আমি এ নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আমার ধারণা আমি সহপাঠী মোহাম্মদ মহিনুল ইসলাম রিজভীর সাথে ও আমাদের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ মনিরুদ্দিন স্যারকে জানালাম। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে তৈরি করেছি ‘স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’।

এ দুই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আনোয়ারা সরকারী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক মোহাম্মদ মনিরুদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ‘আমার ছাত্রদের অসাধারন এ উদ্ভাবনে আমি ভীষণ খুশি। আমাদের শহরে ধূলো ও ময়লা বেড়ে চলেছে ক্রমান্বয়ে। এ প্রকল্পটির বাস্তব প্রয়োগ করে বাংলাদেশের শহরগুলোকে ধূলো-ময়লা থেকে মুক্ত করা গেলে এ উদ্ভাবন স্বার্থক হবে। তারা প্রথম হয়েছে এটি তাদের কাজকে আরো এগিয়ে নেবে।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।