নওমুসলীম স্ত্রীকে ইফতারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ অলি উল্লাহর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বায়েজিদ থানার ওসিকে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছিন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) মামলা দায়েরের বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেন ভিকটিম নারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। মামলার আসামিরা হলো-টিকটকার ফজলুল করিম সুমন, তার শালা আজাদ মিয়া ও দ্বিতীয় স্ত্রীর মা হোসনে আরা বেগম।
অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকার পিতৃহীন যুবতী পিংকি রানী দে। সাগরপাড়ে ঘুরতে গিয়ে পরিচয় হয় ফজলুল করিম সুমন নামে এক যুবকের সাথে। ওই যুবক পিংকির সুন্দর চেহারার বর্ণনা দিয়ে টিকটক করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রস্তাব দেয়।
সেই থেকে পরিচয়, তারপর ধীরে ধীরে প্রেমের প্রলোভনে ফেলে পিংকিকে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রস্তাব দেন সুমন। পিংকিও সরল বিশ্বাসে সেই প্রস্তাবে রাজী হয়ে যান। এভাবেই এক সময় ধর্মান্তরিত হয়ে পিংকি হয়ে যান ইসরাত জাহান তোহা।
তবে সুমনের সাথে বিবাহের পর বের হয়ে আসতে শুরু করে টিকটকার সুমনের আসল রূপ। নওমুসলিম তোহা ধীরে ধীরে জানতে পারেন তিনি আসলে সুমনের ৪র্থ স্ত্রী। চারটি স্ত্রী ছাড়া টিকটকার সুমনের সাথে আরো বেশ কয়েকজন নারীর বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এ সব নিয়ে সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর থেকেই তোহার উপর দফায় দফায় শারীরিক নির্যাতন চালায় সুমন।
সুমনকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পবিত্র রমজানে রোজা রাখতে শুরু করেন তোহা। আর তোহাকে শশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামী সুমনের কাছে আবদার জানাতে থাকেন বারবার। এটাই তোহার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। তোহার অন্য স্ত্রীরা ততদিনে জেনে যান তোহা নামধারী পিংকির সাথে সুমনের বিয়ে হয়েছে।
তোহাকে পিংকির জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সুমনের সাথে চক্রান্তে যোগ দেন তার ২য় স্ত্রীর ভাই ও মা। বেছে নেয়া হয় পবিত্র রমজানের ইফতারের সময়কে। সুমনসহ তার ২য় স্ত্রীর বাড়ির লোকজন একদিন রমজানের ইফতারের সময় শরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে তোহাকে হত্যার চেষ্টা করলে তোহা বিষপানে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
সুমন এ সময় তার সঙ্গীদের নিয়ে স্ত্রী তোহাকে চমেক হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সহায়তায় তোহাকে হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেখে চিকিৎসা করানো হয়।
এর আগে সুমনের প্রলোভনে পিংকির ধর্মান্তরিত হয়ে তোহা নাম ধারন করে বিয়ের পর থেকেই তোহা সামাজচ্যুত হয়ে অনেকটা একঘরে হয়ে যান। ফলে সুমনকে তিনি চাপ দিতে থাকেন তাকে শশুড় বাড়িতে তোলার জন্য। তোহার কথায় সুমন জঙ্গী শাহ মাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় তোহাকে তুলে দিয়ে রাতেই পালিয়ে যায়।
পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তোহা নগরীর বায়েজিদ এলাকার মোহাম্মদনগর বাস্তুহারা কলোনীকে সুমনকে খুঁজে পান। সেখানে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় তোহাকে অবশেষে আরেক স্ত্রীর ভাড়াঘরে তুললেও কথায় কথায় তার উপর নেমে আসতে নির্যাতন।
এভাবে অসহায় তোহার জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে। শুরু হয় শারীরিক, মানসিক নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যাপ্রচেষ্টা। শেষমেষ থানাও মামলা না নেওয়ায় আদালতে আইনের আশ্রয় নেন নির্যাতিতা অসহায় নওমুসলিম নারী ইসরাজ জাহান তোহা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।