২০১৭ সালে ২টি পরীক্ষায় নকল করে শিক্ষকদের হাতে ধরা পড়েছিলেন অমর বণিক। তা সত্বেও অমর বণিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ডে এ সুপারিশ করা হয়। আর এমন ঘটনাকে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মানহানিকর বলে মন্তব্য করছেন বিভাগটির শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৪০৪ ও ৪০৬ নাম্বার কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় নকল করে শিক্ষকদের হাতে ধরা খান অমর বণিক। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাইলুন নাহার (ইরানী) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নকলের বিষয়টিকে আমলে না নিয়েই অমর বণিককে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে বলে নিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।
এ নিয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাইলুন নাহার বলেন, ২০১৭ সালে পরীক্ষায় নকল করার সময় যে শিক্ষার্থী আমার হাতে ধরা পড়েছিলো তাকেই নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি বিষয়। যে ছেলেটা পরীক্ষায় নকল করে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়াটা শুধু বিভাগ নয় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই একটি মানহানিকর বিষয়।
তিনি আরও বলেন, কারো প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই। কিন্তু আমি চাই যোগ্যরাই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাক। নকল করে পাশ করা কেউ আমার বিভাগের শিক্ষক হোক সেটা আমি চাই না। এমন কোনো প্রার্থীকে যদি নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েও থাকে আমি চাইব চূড়ান্ত নিয়োগে যেন তাকে বাদ দেয়া হয়।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মনোবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই বিজ্ঞপ্তির অধীনে প্রভাষক পদের বিপরীতে আবেদন করেন অমর বণিক। সে বছরের ৯ মার্চ বিভাগটির তৎকালীন সভাপতি বিপ্লব কুমার দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্লানিং কমিটির সভায় নকলের বিষয়টি উত্থাপন করে আপত্তি জানান প্লানিং কমিটির সদস্য ও বিভাগটির সহযোগী অধ্যাপক লাইলুন নাহার। এর প্রেক্ষিতে প্লানিং কমিটি নিয়োগ বোর্ডকে নকলের বিষয়টি অবহিত করেন।
এরপর গত ১২ এপ্রিল বিভাগটিতে একজন প্রভাষক চেয়ে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২য় বিজ্ঞপ্তির অধীনে আবারও আবেদন করেন অমর বণিক। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে গত ১২ জুন বিভাগটির প্লানিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লাইলুন নাহার সদস্য হিসেবে ছিলেন না। এ সভায় প্লানিং কমিটির সভাপতি ড. রুমানা আক্তার নকলের বিষয়টি উত্থাপন করলে কমিটির সদস্য ড. অরুনাভ বৈরাগী বাধা প্রদান করে বিষয়টিকে সভায় অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) মনোবিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডে পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. রুমানা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোহাম্মদ দানেশ মিয়া ও জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী। এর বাইরে মনোবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান বিভাগ সংশ্লিষ্ট কাউকেই বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে রাখা হয়নি।
অপরদিকে এসব বিষয় নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নিয়োগ বোর্ডে এমন এমন লোকদের সদস্য করা হচ্ছে যাদের ওই বিভাগের সাথে কোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতাই নেই। যাদেরকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকেই উপাচার্যের ঘনিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ সাধারণ সভাতেও আলোচনা হয়েছে। সভা থেকে উপাচার্য বরাবর শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠিয়েছি।
নকল করা প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন এমন কারো ব্যাপারে যদি অভিযোগ উঠে যে তিনি ছাত্রজীবনে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করেছেন এবং তা যদি প্রমাণ হয় তাহলে সে শিক্ষকের চাকরি চলে যাবে। সে জায়গায় আমি বিশ্বাস করতে চাই না যে একজন নকল করে ধরা খাওয়া প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ব্যাপার। আমরা এটা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সবকিছুর বিষয়ে পূজার ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আন্দোলনে যাব।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।