নাশকতা মামলায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবেদুজ্জামান আমিরীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
বুধবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একটি টিম চট্টগ্রামের পটিয়া থানার মোড় এলাকা থেকে সাংবাদিক আবেদ আমিরীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সেখানে তাকে হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দাম (৩৬) নামে এক ব্যক্তির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী হিসেবে যৌথবাহিনী আবিদ আমেরীকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হলে তিনি জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে স্থানীয় এক বিরোধের ঘটনায় ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা মিশিয়ে ওই বছরের ২০ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন হালিশহরের মুন্সী পাড়া এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দাম। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। মোট ৩১ জন আসামির মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরের পটিয়া এলাকার দুজনকেও সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর একজন স্থানীয় সাংবাদিক পটিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবেদুজ্জামান আমিরী। তিনি দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক পূর্বদেশের কর্ণফুলী ও পটিয়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি কর্ণফুলী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও।
আবেদ আমিরীর সহকর্মী সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, মামলার কথিত অভিযোগে পটিয়ার সাংবাদিক আবেদ আমিরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট তিনি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ভাঙচুর করেছেন। অথচ তিনি ওইদিন হালিশহরেই যাননি, সারাদিন ছিলেন পটিয়াতেই।
তারা বলেন, সাংবাদিক আমিরীকে হালিশহর থানার দায়ের করা মামলাটির বাদি চিনেনও না। বাদি নিজেও বলেছেন, ৪ আগস্টের ভাঙচুরের ঘটনায় আমিরী জড়িত নন।
এরপরও আমিরী কিভাবে ওই মামলায় আসামি হলেন—এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে তার স্বজনরা বলছেন, পটিয়ারই কেউ ষড়যন্ত্র করে আমিরীর নামটি হালিশহরের মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীকে চিনেন না বলে জানান।
এদিকে সাংবাদিক আবেদকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কর্ণফুলী প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আকরাম হোসেন রানা বলেন, আবেদ আমেরী আপোষহীন সাংবাদিক। তিনি সবসময় প্রাণ ও প্রকৃতির পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে লিখে তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে মামলার শিকার হন।
সাংবাদিক আবেদ প্রশাসনের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে লিখেছেন, এসব কারনে মূলত সংক্ষুব্ধ গোষ্ঠীরা চক্রান্ত করে তাকে হেনস্তা করছে।
কর্ণফুলী প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও পূর্বকোণ প্রতিনিধি মোর্শেদুর রহমান নয়ন বলেন, আবেদ আমেরী ২৫ বছরের মফস্বল সাংবাদিকতায় চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে। আজ অগ্রহণযোগ্য একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে দাবি করা হয়েছে তিনি প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা। অথচ মামলার বাদী চেনেন না আসামীকে, আসামী চেনেন না বাদীকে।
সাংবাদিক আবেদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন চরম পেশাদারিত্বের সাথে শিক্ষার্থীদের ন্যায্যতার পক্ষে নিয়মিত পেশাগত দায়িত্বপালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাংবাদিক মোর্শেদুর রহমান নয়ন।
মামলা প্রসঙ্গে পটিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার পটিয়া উপজেলা প্রতিনিধি কাউছার আলম বলেন, গত ৪ আগস্ট পটিয়ায় সারাদিন আমাদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন আবেদুজ্জামান আমিরী। কেননা ওইদিন দিনভর ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরদিন দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় এসব ঘটনার সংবাদ তার নামসহ ছাপা হয়। বুঝতে পারছি না, তিনি পটিয়ায় থেকে হালিশহরে কীভাবে হামলা করেছেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পটিয়া প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এছাড়াও আবেদুজ্জামান আমিরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে, আনোয়ারা প্রেসক্লাব, পটিয়া প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা অনতিবিলম্বে সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।