নিষিদ্ধ আকর্ষণ ও অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম

‘দ্য সাইলেন্স’ ও ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’র পর্যালোচনা

নিষিদ্ধতা থেকেই যেন সৃষ্টি হয়েছে এই পৃথিবীর। হযরত আদম ও হাওয়ার গল্প থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক সভ্যতা সর্বত্রই নিষিদ্ধের প্রতি মানুষের প্রবল আকর্ষণ। এ আকর্ষণ যেন আমাদের জেনেটিক কাঠামোতেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এই মনস্তত্ত্বকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন নির্মাতা ভিকি জাহিদ তার ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’-এ। যেখানে একটি নিষিদ্ধ ভালোবাসার গল্পের মধ্য দিয়ে মানুষের গভীর আকাঙ্ক্ষা, মানসিক টানাপোড়েন এবং সামাজিক বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে।

নিষিদ্ধতা ও অপরিচিতের প্রতি এই টান নতুন কিছু নয়। প্রাচীন সভ্যতার মানুষ বিপদ জেনেও বিপজ্জনক প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করত। এ যেন এক সুপ্ত আনন্দ, এক অভিযাত্রা। যার শেষ জানা নেই, কিন্তু শুরুটা রোমাঞ্চকর। এরই চমৎকার রূপক হলো ক্লাসিক রূপকথা-ভিত্তিক সিনেমা ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’। যেখানে এক দানবের সাথে এক নারীর প্রেম গড়ে ওঠে। এই গল্প আমাদের শেখায় সৌন্দর্য বাইরে নয়, ভেতরের গুণেই মানুষ বড় হয়।

এমন গল্প আমাদের একটি গভীর সত্যের সামনে দাড় করায়। নিষিদ্ধ করে কিছু দমন করা যায় না, বরং নিষেধাজ্ঞা মানুষকে আরও বেশি টানে। রাজনৈতিক বাস্তবতায়ও আমরা এ প্রবণতা দেখতে পাই। যারাই দমন-পীড়নের শিকার হন, তারা সময়ের ব্যবধানে সহানুভূতির পাত্র হয়ে ওঠেন। হয়ে ওঠেন এক প্রতিরোধের প্রতীক।

বর্তমান বাস্তবতায় এ কথাগুলো আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করি। আজকের বাংলাদেশে যে অস্থিরতা চলছে তা শুধু বাহ্যিক দমন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকলেও তাদের বিবেক বলে, কোনো নিরীহ মায়ের বুক যেন খালি না হয়। সেনাবাহিনীর কাঁধে শক্তি থাকলেও তাদের শিক্ষা ও চেতনায় আছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস।

তাই মনে রাখা জরুরি এই রাষ্ট্র শুধু আইন দিয়ে চলে না, চলে বিবেক, বুদ্ধি ও ন্যায়ের চেতনায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আমাদের সেনা, আমলা, পুলিশ ও জনগণ ৭১-এ যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিল। তেমনি আজও তারা দেশের প্রয়োজনে জেগে উঠবে।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশপ্রেমিক কোনো মানুষ ৭১’র সাথে বেঈমানি করবে না। আমি আমাকে দিয়েই ফিল করি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। কিন্তু শৈশবে মুক্তিযুদ্ধকে কিছুটা প্রত্যক্ষ করেছি,বাকিটা ইতিহাস পড়ে জেনেছি। আমি আমার বিবেকের তাড়নায় এসব লিখছি। কারণ আমি হিপোক্রেট নই, মোনাফেক নই। তাই আমার আদর্শিক জায়গা থেকে যেটাকে ন্যায়সঙ্গত মনে করি সেটাই লিখি। আমি আমার দেশপ্রেমের তাগিদ থেকেই এসব লিখি। এই সত্যগুলো লিখে না গেলে আমি মরেও শান্তি পাবো না।

আজ যারা সত্য উচ্চারণ করছেন তাদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। মাসুদ কামাল, জিল্লুর রহমান, পান্না ভাইদের মতো সাংবাদিকেরা নিঃসন্দেহে বিবেকের কণ্ঠস্বর। আর যারা চুপ করে আছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করি—আপনাদের ভয় কিসের? কী আপনাদের আটকে রেখেছে?

আমাদের দেশের বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীদের মস্তিষ্কে এখন অনেকটা পচন ধরেছে। সত্য কথা বলার সাহস তাদের কারও দেখি না। একটা সময় দেখেছি জাতির ক্রান্তিলগ্নে বুদ্ধিজীবীরাই সোচ্চার ছিল। আমি জানি না বুদ্ধিজীবীদের ভয় কোথায়? তাদের কি কোনো অবৈধ সম্পদ বা কোনো অনৈতিক কর্ম আছে। সত্য কথা বলার সাহসও তারা হারিয়ে ফেলবে?কেন তারা ন্যায় ও সত্য কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন?

একজন আইনজিবীও পাই না যে,সাহস করে সংবিধানের সত্য কথাটি বলবেন। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা কিছুটা সংবিধানের/আইনের ইন্টারপ্রিটেশন দিয়েছেন। বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান এবং হারুনুর রশীদকে দেখেছি নেতাসূলভ আচরণ করতে, ব্যক্তিত্ব নিয়ে কথা বলতে। আওয়ামী লীগেও আইভী আপা এবং কাদের সিদ্দিকীকে দেখেছি সাহস নিয়ে কথা বলতে। এরা বিশ্বাস করে ন্যায়পরতা এবং জনগণই তাদের শক্তি। আপনাদের স্যালুট জানাই। আপনারা যে দলেরই হোন আপনারা রাষ্ট্রের সম্পদ।

আমার বিশ্বাস যেই বাংলাদেশে আজ সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসনের আমলারা কাজ করছেন তারা নিশ্চই জানেন এই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। নিশ্চই তারা দেশপ্রেমিক। কেউ তারা জ্ঞানপাপী নয়। শুধু এইটুকুই বলবো-আপনারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুন, সত্যের পক্ষে থাকুন,বাংলাদেশের পক্ষে থাকুন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।