পটিয়ায় জনরোষে হুইপ সামশু—সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন ‘বিএনপির সুরে’

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পিংগালা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর প্রচারণা বহরে হামলার অভিযোগ এনে সাংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে হুইপ সামশু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই পটিয়ায় আরেকজন প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারী কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমার প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিয়ে আসছেন। যেখানেই আমার কর্মি-সমর্থকরা গণসংযোগে যাচ্ছেন সেখানেই হামলা করছে। আমার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করছে। তিনি আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও বিষোদগার মূলক বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন সভা-সমাবেশে। আমার নেতা-কর্মিদের ওপর হামলা করা, তাদের মাঠে নামতে না দেয়ার নির্দেশমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। ওনার সঙ্গে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ সুবিধাভোগী শ্রেণী জুটেছে। জনাব মোতাহেরের এইসব সন্ত্রাসীরা পটিয়ায় রীতিমতো তান্ডব শুরু করেছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।
হুইপ সামশুর এই অভিযোগকে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের সুরে কথা বলছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের এসব কথা বলেন পটিয়া আসনের বর্তমান সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী।
নিজে শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার গণসংযোগে সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি ও ঢল দেখে জনাব মোতাহেরুল ইসলাম হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তাই আমাকে ঠেকাতে তিনি সহিংসতার পথ বেছে নিয়িছেন। সন্ত্রাসীদের দলে ভিড়িয়েছেন। যাদের নাম শুনলে পটিয়ার মানুষ এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দিয়ে হুইপ শামসুল হক চৌধুর বলেন, গত সোমবার পটিয়ার হল ওকে নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে অফিস উদ্বোধন, সংবাদ সম্মেলন ও আমার সমর্থনে একটি কর্মি সমাবেশ ছিল। ওই সভায় যাওয়ার পথে ইন্দ্রপুল বাইপাস মোড় ও হাবিলাসদ্বীপের পাঁচুরিয়া এলাকায় আমার সমর্থকদের ওপর হামলা কার জনাব মোতাহের অনুসারীরা। রাতে জিরি ফকিরা মসজিদ এলাকায় আমার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয় ও কর্মীদের আহত করা হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শান্তিরহাট ও কুসুমপুরা এলাকায় আমার একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। বাকখাইন এলাকায় আমাদের একটি প্রচার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রচার গাড়ির নিরীহ চালকের ওপর হামলা করে তারা। মঙ্গলবার রাতে প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সামনেই মঈনুদ্দিন নামে আমার সমর্থক এক কিশোরকে বেধড়ক মারধর করে। মেহেরআটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাত আটটার এ ঘটনা ঘটায় তারা। আমার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার নেতা কর্মীদের বাড়ীতে সম্প্রাসীদের পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে।।
সর্বশেষ বুধবার বিকেলে আমি পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নে গণ সংযোগে যাই। গণসংযোগ শেষে আমাদের ইউনিয়নের নেতা নুরুল হুদা খানের বাড়িতে আমরা খেতে গেলে বাইরে অপেক্ষামান গণসংযোগে আসা কিছু সাধারণ লোকজন ও কর্মি সমর্থকদের ওপর হামলা করে জনাব মোতাহেরের মিছিল নিয়ে আসা সন্ত্রাসীরা। তারা আমার প্রচারণার ৬-৭টি গাড়ির টায়ার কেটে দেয়। প্রকাশ্য দিবালোকে রাম দা, কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালায়। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একজন ইউপি চেয়ারম্যান এ হামলায় নেতৃত্ব দেন। আমরা এইসকল ঘটনা নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং একটি ঘটনার ইতিমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে।

হুইপ শামসুল হকের অভিযোগের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর সামশুল হক চৌধুরী পটিয়ার এমপি থাকাকালে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সামশুল হক লীগ তৈরি করেছিলেন। তিনি দুর্দিনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন দলের হাইব্রিডদের দলে ভিড়িয়েছেন। সামশুল হক চৌধুরী নিজে বিএনপির নেতা ছিলেন। তার কথাবর্তাও বিএনপি নেতাদের মতো। পটিয়ায় সামশুলীগের চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ইয়াবা কারবারসহ নানা অপকর্মের বিরোধীতা করতে গিয়ে দুর্দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা হামলা মামলার শিকার হয়েছিলেন। এখন তিনি ক্ষমতাহীন হওয়ার পর মূলত তার মামলা হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তরাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী এবং জনগণের রোষানলে পড়ছেন। এখানে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল আরও বলেন, হুইপ সাহেব তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেওয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন। মনোনয়ন দেওয়ার আগে তিনি সবাইকে লাঞ্চ করিয়ে বলেছিলেন—আপনারা আমাকে ৩শ জন প্রার্থী ঠিক করে দিন। আমরা সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস-আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়ে বলেছি আপনি যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তার জন্য কাজ করবো। তিনি ৩শ আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। হুইপ সামশু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছেন, সেদিনের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।