মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে রাজধানীর মিরপুর, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম ইপিজেডে সংঘটিত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কেঁপে উঠেছে দেশ। মিরপুরের রাসায়নিক গুদাম থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পর্যন্ত—ঘন ঘন এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ও বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এসব আগুন নিছক দুর্ঘটনা, নাকি কোনো পরিকল্পিত নাশকতা?
গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন প্রাণ হারান। দগ্ধ হন আরও অনেকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, টিনশেড গুদামে থাকা দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়, এবং প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর দুদিন পরই, ১৮ অক্টোবর দুপুর সোয়া ২টার দিকে আগুন লাগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে। সেখানে আমদানি পণ্য সংরক্ষণ করা হয়। আগুনে ওই ভবনের প্রায় সব মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। সন্ধ্যা নাগাদ আগুন আংশিক নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানান, পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে এখনো পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি।
অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। ৮টি ফ্লাইট চট্টগ্রামে ও ৩টি সিলেটে অবতরণ করে, এছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়।
আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে অন্তত ১৭ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনকে সিএমএইচে ও বাকিদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এলাকার একটি তোয়ালে, ক্যাপ ও মেডিকেল গাউন তৈরির সাততলা ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। ভবনটি থেমে থেমে জ্বলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যদিও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়ায় বড় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ভবনের ভেতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে।
১৪ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ডে একদিকে প্রাণহানি, অন্যদিকে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধারাবাহিক এসব ঘটনায় পরিকল্পিত নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্তে পৃথক কমিটি গঠন করা হবে।



মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।