পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছর

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পূর্তি আজ। পার্বত্য জেলাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে পার্বত্য জেলাগুলোয় দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটে, সূচিত হয় শান্তির পথচলা। দিনটি উপলক্ষ্যে পার্বত্য এলাকাগুলোতে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

কাপ্তাই: পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬তম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে কাপ্তাই ৫৬ বেঙ্গলের কাপ্তাই জোনের আয়োজনে শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে বাদ্যযন্ত্র সহকারে বর্ণাঢ্য র‍্যালি এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছর 1

কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নূর উল্লাহ জুয়েল পিএসসি শান্তির দূত পায়রা অবমুক্ত ও বেলুন উড়িয়ে র‍্যালির উদ্বোধন করেন। এরপর বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে নানা শ্রেণী পেশা মানুষের উপস্থিতিতে র‍্যালীটি কাপ্তাই সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুনবাজার হয়ে কাপ্তাই জোন সদর শহীদ আফজল হক হল রুমে এসে শেষ হয় ।

পরে আলোচনা সভায় জোন অধিনায়ক ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই ছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা হেডম্যান এসিসোয়েশন এর সভাপতি থোয়াই অং মারমা।

এ সময় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী মানুষের জন্য এই শান্তি চুক্তি ছিল একটি যুগান্তরকারি এবং মহৎ উদ্যোগ। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীরা আজ এর সুফল ভোগ করছে। পাহাড়ে অনেক অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। পাহাড়ে যারা অশান্তি করে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে হবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সকলকে শান্তি চুক্তির শুভেচ্ছা জানানো হয়।

কাপ্তাই জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. খাইরুল আমিন পিএসসি, কাপ্তাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাছির উদ্দীন, চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং, কাপ্তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শাহীনুর রহমান, কর্ণফুলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রহমান সহ জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কারবারি, স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ কাপ্তাই জোনের সকল পদবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

লংগদু: রাঙামাটির আরেক উপজেলা লংগদুতে সেনা জোনের (তেজস্বী বীর) পক্ষ থেকে দিনটি উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন করা হয়। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালিটি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে এসে শান্তি সমাবেশে মিলিত হয়।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছর 2

শান্তি সমাবেশে লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন লংগদু জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল হিমেল মিয়া।

বক্তব্যে প্রধান অতিথি হিমেল মিয়া বলেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমেই পাহাড়ে আমরা সকল সম্প্রদায়ের লোকজন বৈষম্য ভেদাভেদ ভুলে দেশ মৃত্তিকার টানে কাঁধে কাধ রেখে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। পাহাড়ে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা সচেষ্ট।

তিনি আরো বলেন, আমরা যদি এলাকায় মিলেমিশে বসবাস করি তাহলে লংগদু হবে অন্যতম মডেল উপজেলা। এখানকার মৎস, কৃষি, জলবায়ু সহ যেসব ক্ষেত্র উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তা যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে ব্যাপক উন্নয়নে অগ্রগতি হবে।
লংগদু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সেলিম, লংগদু সদর ইউপি চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলি, প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা মো. এখলাছ মিঞা খান প্রমুখ।

এছাড়াও জোন উপ অধিনায়ক মেজর আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান, ৩৮ আনসার ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মীরবহর শাহাদাত হোসেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন, সিএ কো-কোম্পানী কমান্ডার মো. আরিফুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, মাইনীমূখ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল, কালাপাকুজ্জ্যা ইউপি চেয়ারম্যান বারেক দেওয়ান, আটারকছড়া ইউপি চেয়ারম্যান অজয় চাকমা মিত্র, জেএসএস (সংস্কার) দলের লংগদু থানা কমিটির সভাপতি অলঙ্গ চাকমা সহ সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা, শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছর 3

শান্তি চুক্তি বর্ষপূতি উপলক্ষে লংগদু সেনা জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও লংগদু বিদ্যানিকেতনে চিত্রাঙ্কন ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জোন অধিনায়ক হিমেল মিয়া পুরস্কার বিতরণ করেন। এছাড়াও শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে মাইনী খালে বিকাল ৩টায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এবং সন্ধ্যায় জোন সদরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

রাঙামাটি ছাড়া খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানেও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানান কর্ মসূচি পালন করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।