প্রায় ৪০ শতক জমিতে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ আখ চাষ করে আসছেন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বারঘোনার স্থানীয় বাসিন্দা রাশিয়া তনচংগ্যা। বংশ পরম্পরায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আখ চাষ শুরু করেছেন তিনি। বিশেষ করে পূর্বে তার পিতা ও দাদারাও একসময় এই আখ চাষে করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি প্রথমদিকে নিজস্ব অর্থায়নে বাজার থেকে ২০৮ জাতের আখের চাষ শুরু করেছিলেন এবং তাতে খুব ভালো সফলতা পান।
আরেকজন সফল চাষী মৃণাল তনচংগ্যা। তিনি অন্যান্য ফসল চাষ করলেও বর্তমানে আখ চাষে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। তারও প্রায় ৩৩ শতক জমিতে সরকারি সহযোগীতা এবং নিজস্ব চেষ্টায় তিনি আখ চাষ শুরু করে সফলতা পাচ্ছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতেরও আখগুলো প্রায় পরিপক্ক হওয়ায় অনেক আনন্দিত হয়েছেন তিনি।
রাশিয়া তনচংগ্যা এবং মৃণাল তনচংগ্যার মতো পাহাড়ের আরও অনেক চাষীদের মুখে হসি ফুটেছে আখ চাষে। সেই সাথে পাহাড়ি এসব আখ দেশের চিনি শিল্পে বিরাট অবদান রাখছে। পরিবর্তন করছে স্থানীয় জনগণের জীবযাত্রার মান। সেই সাথে কমছে বেকার সমস্যাও।
সম্প্রতি কাপ্তাইয়ের ১ নম্বর চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নস্থ বারঘোনা তনচংগ্যার পাড়ায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একের পর এক আখের ক্ষেত। যেখানে সারি সারি দাড়িয়ে থাকা আখগুলো নজর কাড়ছে পথচারীদের। প্রায় প্রতিটি আখ ক্ষেতের আখগুলো বেশ পরিপক্ক হওয়ার ফলে দেখতেও বেশ ভালো লাগছে। ইতিমধ্যে চাষীরা আখ তোলার জন্য প্রহর গুনছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পাইকার ক্রেতারাও আখ ক্ষেতগুলো কিনে নিতে ছুটে যাচ্ছেন চাষীদের দ্বারে দ্বারে।
চাষী রাশিয়া তনচংগ্যা বলেন, গত অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রজেক্টের সহযোগীতায় আখের উন্নত জাত রঙবিলাশের চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার ক্ষেতের আখগুলো যথেষ্ট পরিপক্ক হয়েছে। আগাম দুই-এক মাসের মধ্যে আখগুলো তোলা শুরু হবে।
এছাড়া আখ চাষের পরিচর্যার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমদিকে আখ চাষ শুরু করার পর প্রতিনিয়ত আখ পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত শুকিয়ে যাওয়া পাতাগুলো তুলে ফেলতে হয়। কারণ শুকনো পাতাগুলো আখ বেড়ে উঠতে বাধা প্রদান করে। তাছাড়া তিনি এবং তার পরিবার নিয়মিত আখের পরিচর্যা করে আসছেন বলে তিনি জানান। পাশাপাশি প্রতিবছর আখ চাষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করলেও দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন বলে জানান।
নিজের সফলতার কথা জানিয়ে আরেক চাষী মৃণাল তনচংগ্যা বলেন, যদি এই বারঘোনা তনচংগ্যা পাড়ায় পানির সমস্যা দূর করা যায় এবং স্থানীয় চাষীদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় তবে সকলেই উপকৃত হবেন। অনেকে নতুন করে আখ চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। তারাও সাফল্য পেতে পারেন।
এদিকে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন আখ ক্ষেত থেকে দীর্ঘ কয়েকবছর যাব পাইকার দরে আখ সংগ্রহ করে আসছেন আখ ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান, আব্দুর রহিমসহ কয়েকজন ক্রেতা। তারা জানান, কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এসব আখের যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। দেশের অনান্য স্থান থেকে এখানে আখের দামও অনেক সাশ্রয়ী। অন্যদিকে কাপ্তাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হওয়ার ফলে প্রতিবছরই আমাদের মতো পাইকার ক্রেতারা এই আখ ব্যবসা করে বেশ লাভবান হচ্ছে বলে জানান।
এসব বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, আখ আমাদের অর্থকরী ফসল। একসময় দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য আখ চাষ কমে এসেছিলো কিন্তু বর্তমানে আখ চাষে সুদিন ফিরে এসেছে। অনেক চাষী বর্তমানে আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পাশাপাশি আমরা কাপ্তাইয়ের আখ চাষীদের আখের ক্ষেতের মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে সরিষা বা অনান্য ফসল চাষাবাদে আগ্রহী করে আসছি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ের আখ চাষীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এতে আখ চাষীরা অনেকটা উপকৃত হয়েছে। সর্বপরি বলা যায় যে, দেশে প্রয়োজনীয় চিনির চাহিদা মেটানোর জন্য আখ চাষের বিকল্প নেই। তাই কৃষকদের এই অর্থকরী ফসল আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।