পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটির পাহাড়ে প্রতিবারের মতো এবারও ধান, ভূট্টা, কাকন, হলুদ, মারফাসহ বিচিত্র রকমের ফসল চাষ করেছেন চাষীরা। তবে কিছু ফসল সারা বছর ধরে উত্তোলন হলেও বর্তমানে জুম ধান তোলার মৌসুম চলে এসেছে। যার ফলে পাহাড়ে পাহাড়ে এখন দেখা যাচ্ছে পাকা ধানের সমারোহ। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে চারিদিক। আবহাওয়া ঠিক থাকলে খুব দ্রুতই শুরু হবে ধানা কাটার উৎসব।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে হয়ে থাকে বেশিরভাগ জুম চাষ। সম্প্রতি উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়ন সংলগ্ন সীতাপাহাড় ও রামপাহাড়ের কিছু অংশে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়জুড়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জুমর ফসল। সোনালী রঙের পাকা ধানের একটি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক।
স্থানীয় জুমচাষী সুমেচিং মারমা জানান, তিনি দীর্ঘবছর ধরে পাহাড়ে জুমচাষ করে আসছেন। এই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল তার পরিবার। সারাবছর কষ্ট করে জুম চাষ করার পর এখন ঘরে ফলন তোলার সময়। তবে গতবছরের তুলনায় এবার একটু বৃষ্টিপাত ভালো হওয়াতে ফলন ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান। কিন্তু একটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে মাটির উর্বরতার কারণে সার ব্যবহার করা না হলেও এখন জুমে সার দিতে হয়। কেননা দিন দিন পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কমে আসছে।
স্থানীয় আরেক জুমচাষী মাবুচিং মারমা জানান, একসময় একটি পাহাড়ে দীর্ঘ বছর পরপর জুম চাষ করা হতো। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জুম পাহাড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন একই পাহাড়ে প্রতি বছর জুম চাষ করা হচ্ছে। যার ফলে মাটিতে সারের ব্যবহার বাড়াছে। এতে মাটির গুণাগুন কমে আসছে। তবে অনান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়ে থাকে। যেখানে ধানের পাশাপাশি আদা, হলুদ, মারফা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই কৃষি বিভাগ থেকে জুমচাষীদের ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশ্র ফল, ফসল চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তবে জুমচাষীরা স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করলেও কৃষিবিভাগ থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উচ্চ ফলনশীল ধানের ব্রি-ধান-৮৭ জাতের ধানের চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, কাপ্তাইয়ের বেশকিছু এলাকার পাহাড়ে ভালো জুমচাষ হলেও চিৎমরম ইউনিয়ন এবং ব্যাঙছড়ি, সীতাপাহাড় এলাকার পাহাড়গুলোতে ভালো জুম চাষ হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী চাষ পদ্ধতি ‘জুমচাষ’। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যবদি পাহাড়ের প্রান্তিক পাহাড়ি জুমিয়ারা ঐতিহ্যগতভাবে জুমচাষ করে আসছে। এই জুম চাষের মাধ্যমে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ জীবনধারণ করে আসছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।